ভারত সরকারের অনুদান প্রত্যাখ্যান করলো দারুল উলুম দেওবন্দ!
কি অবাক হলেন?
![]() |
| দারুল উলুম দেওবন্দ |
নতুন কিছু নয় সেই ২০১৫ সালের ২৭ মার্চ শুক্রবারের কথা।চলুন এবার জেনে মূল আলোচনার কথা।
ভারতের ঐতিহ্যবাহী ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দেওবন্দের দারুল উলুম সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তাদের অধীনস্থ মাদ্রাসাগুলোতে শিক্ষার আধুনিকীকরণের জন্য তারা কোনও সরকারি অনুদান নেবে না।
নরেন্দ্র মোদী সরকার এ বছর তাদের বাজেটে মাদ্রাসা শিক্ষার সংস্কারের জন্য ১০০ কোটি রুপি বরাদ্দ করেছে, কিন্তু দারুল উলুম মনে করছে এই সরকারি সহায়তা নিলে তাদের মাদ্রাসাগুলোয় যে ধর্মীয় শিক্ষার পরম্পরা আছে তা ব্যাহত হবে।
দেওবন্দের দারুল উলুমের অনুমোদিত প্রায় তিন হাজার মাদ্রাসা আছে সারা দেশ জুড়ে আর এ সপ্তাহের গোড়ায় তাদেরই সংগঠন রাবতা-ই-মাদারিস-ই-ইসলামিয়ার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হল দেওবন্দের ক্যাম্পাসে।
সেখানে ৪ হাজারেরও বেশি মৌলানার উপস্থিতিতে দারুল উলুম সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাদের শিক্ষাপদ্ধতি বা সিলেবাসের সঙ্গে কোনো আপস করা হবে না, আর তাই তাদের মাদ্রাসাগুলো এ জন্য সরকারি অনুদানও প্রত্যাখ্যান করবে।
দারুল উলুমের মাদ্রাসা বিভাগের অধিকর্তা মওলানা আবদুল খালেক এর কারণ ব্যাখ্যা করে বিবিসিকে বলেন, ‘দেড়শো বছরের পুরনো এই প্রতিষ্ঠান তাদের ইতিহাসে কখনও সরকারি অনুদান নেয়নি ভারতেরও না, বাইরের কোনো সরকারেরও না। দেওবন্দের প্রতিষ্ঠাতারাই এই বিধান করে গেছেন কারণ সরকারের টাকা নিলে তাদের কথাই তো আমাদের শুনতে হবে, আমরা আমাদের স্বাধীনতা হারাব!’
বস্তুত দারুল উলুমের প্রধান আশঙ্কা এটাই সরকারি অর্থ নিলে তাদের পাঠক্রম বা পড়াশোনাতেও সরকার নাক গলাবে।
দারুল উলুমের উপাচার্য আবুল কাশেম নোমানিও জানিয়েছেন, আধুনিকতার নামে তারা তাদের মাদ্রাসায় ধর্মীয় শিক্ষার বিশুদ্ধতা নষ্ট করতে পারবেন না।
বহু বছরের অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান ও বামপন্থী রাজনীতিক মহম্মদ সেলিমও মনে করছেন, মাদ্রাসা শিক্ষার সংস্কার চাইলে সরকারকে অন্য রাস্তায় এগোতে হবে।
তার মতে, ‘ধর্মীয় শিক্ষায় সরকারের কোনো ভূমিকা দরকার নেই, টাকা দেওয়ারও দরকার নেই। ধর্মীয় শিক্ষা তাদেরই কাজে লাগুক, যারা ছেলেদেরকে মওলানা-মৌলবী-কাজী বানাতে চান!’
মহম্মদ সেলিম আরও বলেন, ‘যেখানে সাধারণ স্কুল-কলেজ নেই বা শিক্ষক নেই, সেখানে অনেকটা বাধ্য হয়েই লোকে মাদ্রাসায় ভর্তি হয়। সরকার বরং বেশি করে স্কুল-কলেজ করুক তাহলে তাদের মাদ্রাসাতেও নাক গলাতে হবে না, মাদ্রাসাগুলোকেও সরকারি অর্থের ভরসায় থাকতে হবে না!’
বস্তুত সরকার দেশের যে সব মাদ্রাসায় নাক গলিয়েছে, সেখানে পড়াশোনা লাটে উঠেছে বলেই দাবি করছেন দারুল উলুমের কর্তৃপক্ষ।
মওলানা আবদুল খালেক বলেন, ‘সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত মাদ্রাসায় পড়াশোনা কিছু হয় না সেখানে শিক্ষকরা শুধু সরকারের কাছ থেকে মাইনে পেয়েই খালাস। তাদের পড়াশোনার তাগিদ থাকে না, ছাত্রদেরও শেখার গরজ থাকে না। দেশে সবচেয়ে বেশি সরকারি অনুদান-পাওয়া মাদ্রাসা আছে বিহারে, সেগুলোর সবই একেবারে মৃতপ্রায় দশা!’
ভারত সরকার অবশ্য মনে করছে, প্রচলিত মাদ্রাসা শিক্ষার মধ্যে ইংরেজি বা কম্পিউটার প্রযুক্তির মতো বিষয় এনেই ওই শিক্ষাপদ্ধতির সংস্কার করতে হবে এবং তার জন্য তারা অর্থ খরচেও প্রস্তুত।
কিন্তু দারুল উলুমের সিদ্ধান্ত থেকেই পরিষ্কার, মাদ্রাসা আধুনিকীকরণে সরকারের এই কর্মসূচী রীতিমতো প্রতিরোধের মুখে পড়তে চলেছে।

0 comments:
Post a Comment