নোটিশ
আপনি কি ব্লগ কিংবা ফেসবুকে ইসলাম এবং সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি করতে আগ্রহী?
তাহলে আপনার লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের কাছে। বিস্তারিত তথ্যের জন্য আমাদের ফেসবুক পেজে মেসেজ দিন। ধন্যবাদ

Tuesday, January 2, 2018

রোগীর সেবাশুশ্রূষা উত্তম ইবাদত:

মুফতি মুহাম্মাদ শোয়াইব
পাড়া-প্রতিবেশী , আত্মীয়স্বজন বা বন্ধুবান্ধবের মধ্যে কেউ যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে , তাকে দেখতে যাওয়া ও তার অবস্থা জিজ্ঞেস করা মুস্তাহাব । যদি রুগ্ণ ব্যক্তির দেখাশোনা করার মতো তার কোনো আত্মীয়স্বজন না থাকে , তাহলে সর্বসাধারণের মধ্যে তার সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ব্যক্তিদের ওপর তার সেবাশুশ্রূষা করা ফরজে কেফায়া ।

রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন , এক মুসলমানের ওপর অপর মুসলমানের হক পাঁচটি- সালামের জবাব দেয়া , রোগীকে দেখতে যাওয়া , জানাজায় শরিক হওয়া ,

দাওয়াত কবুল করা , হাঁচির জবাব দেয়া । ( বুখারি , মুসলিম ও মিশকাত শরিফ : হাদিস নম্বর ১৫২৪) । 

হজরত বারা ইবনে আজিব রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: আমাদের সাতটি কাজের নির্দেশ দিয়েছেন- প্রথম , রোগীর শুশ্রূষা করা ; দ্বিতীয় , জানাজার পশ্চাতে চলা। তৃতীয়, হাঁচিদাতার জবাবে

‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলা ; চতুর্থ, দুর্বল মানুষের সাহায্য করা । পঞ্চম , নিপীড়িত ব্যক্তিদের সাহায্য করা ; ষষ্ঠ , সালামের প্রচার-প্রসার ঘটানো ; সপ্তম , কসমকারীর কসমকে পুরা করতে সাহায্য করা । ( বুখারি শরিফ ৭/১১৩ : হাদিস নম্বর ৫৬৩৫) ।

সর্বপ্রথম রাসূল সা: যা বলেছেন তা হচ্ছে ,
রোগীর সেবাযত œ করা । অসুস্থ ব্যক্তির অসুস্থতার কথা জিজ্ঞেস করা । রাসূলুল্লাহ সা: নিজেও রোগীর সেবাশুশ্রূষা করতেন।

হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সা: এক অসুস্থ ইহুদি গোলামকে দেখতে গিয়ে তাকে ইসলামের দাওয়াত দিলে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন ।

এই আমলটি সাধারণত আমরা সবাই করি ।

তবে বর্তমানে রোগীর সেবাশুশ্রূষা শুধু একটি প্রচলন হয়ে গেছে । আমরা অসুস্থ ব্যক্তির শুশ্রূষা করতে যাই লোকলজ্জার ভয়ে । লোকলজ্জার মানসিক চাপ নিয়ে রোগীর শুশ্রূষা করলে আখেরাতের নেক সাওয়াবের আশা করা যায় না। সাওয়াব লাভ করার জন্য ইখলাস বা আন্তরিকতা ও আল্লাহ তায়ালাকে সন্তুষ্ট করার মানসিকতা থাকা জরুরি । এক হাদিসে কুদসিতে বিষয়টি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভাষায় উল্লেখিত হয়েছে। হাদিসটি এই-

‘কেয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা বলবেন,
হে আমার বান্দা! আমি তোমার প্রভু। আমি অসুস্থ ছিলাম , তুমি আমাকে দেখতে আসনি । বান্দা বলবে , হে প্রভু! আপনি বিশ্বজাহানের প্রতিপালক, আমি কিভাবে আপনাকে দেখতে যেতে পারি ? আল্লাহ তায়ালা বলবেন , তুমি কি জানতে না যে ,

আমার অমুক বান্দা অসুস্থ ছিল ? যদি তুমি তাকে দেখতে যেতে তাহলে তুমি সেখানে আমাকে পেতে। আল্লাহ তায়ালা আবার হে আমার বান্দা! আমি তোমার কাছে খাবার চেয়েছিলাম , কিন্তু তুমি আমাকে খাবার দাওনি । বান্দা বলবে , ইয়া রব! আমি আপনাকে কিভাবে খাবার দিতে পারি ?
আপনি হলেন সারা জাহানের পালনকর্তা ।

আল্লাহ তায়ালা বলবেন , আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাবার চেয়েছিল কিন্তু তুমি তাকে খাবার দাওনি । যদি তুমি তাকে খাবার দিতে তাহলে আজ আমাকে কাছে পেতে । পুনরায় আল্লাহ তায়ালা বলবেন, আমি তোমার কাছে পানি চেয়েছিলাম , তুমি আমাকে পানি দাওনি ।

বান্দা আগের মতোই উত্তর দেবে । আল্লাহ তায়ালা বলবেন , তোমার কি স্মরণ আছে ,
আমার এক বান্দা তোমার কাছে পানি চেয়েছিল; কিন্তু তুমি তাকে পানি দাওনি ? তুমি কি জানো , তুমি যদি সেদিন তাকে পানি দিতে তাহলে তার প্রতিদানে আজ আমাকে কাছে পেতে । ’ ( বুখারি শরিফ : রোগীর সেবা করার ফজিলত , রিয়াদুস সালেহিন) । 

অসুস্থকে দেখতে যাওয়া ,
ক্ষুধার্তকে খাবার খাওয়ানো ,
পিপাসার্তকে পানি পান করানো- এগুলো হলো মানুষের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশের মাধ্যম । সহানুভূতি এমন এক মহৎ গুণ, যার কারণে মানুষ আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য অর্জন করতে পারে ।

আরেক হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন , ‘ কোনো মুসলমান ব্যক্তি অপর মুসলমান ব্যক্তির সেবাশুশ্রূষা করলে , যতটুকু সময় ধরে সেবা করে ততটুকু সময় সে ধারাবাহিকভাবে জান্নাতের বাগিচায় বিচরণ করে, যতক্ষণ পর্যন্ত সে প্রত্যাবর্তন না করে। ’ ( সহি মুসলিম , কিতাবুল বির ওয়াস সেলাহ) ।

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘ কোনো মুসলমান ব্যক্তি অপর মুসলমান ব্যক্তিকে সকালে সেবাশুশ্রূষা করলে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৭০ হাজার ফেরেশতা তার জন্য দোয়া করতে থাকে । সন্ধ্যায় সেবাশুশ্রূষা করলে সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত ৭০ হাজার ফেরেশতা তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং আল্লাহ তায়ালা জান্নাতে তার জন্য একটি বাগান নির্দিষ্ট করেন । ’

এটা কোনো সাধারণ প্রতিদান নয় । মাত্র একটু মেহনতের দ্বারা মেহেরবান খোদা আমাদের কী পরিমাণ সাওয়াব দান করছেন! তার পরও কি আমরা এই চিন্তা করব যে , অমুকে তো আমি অসুস্থ হওয়ার পর আমাকে দেখতে আসিনি । আমি কেন তাকে দেখতে যাবো ? এজাতীয় চিন্তা দ্বারা যে আমার নিজের আখেরাত ধ্বংস হচ্ছে , আশা করি তা বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন নেই । অমুক যদি সাওয়াব অর্জন না করেন ,

তার যদি ৭০ হাজার ফেরেশতার দোয়ার দরকার না হয় , সে যদি জান্নাতের বাগিচা অর্জন করতে না চায় তাহলে আমিও কি তা অর্জন করব না ? আমি কি অমুকের সাথে হিংসা করে আমার আখেরাত নষ্ট করব ?

আমি কি ৭০ হাজার ফেরেশতার দোয়া থেকে বঞ্চিত হব? আমার কি জান্নাতের বাগিচার দরকার নেই ?
যদি রোগীর পক্ষ থেকে আমি কষ্ট পেয়ে থাকি অথবা তার সাথে আমার আন্তরিকতা না থাকে , তার পরও তার সেবাযতেœ র জন্য আমার যাওয়া উচিত । এতে দ্বিগুণ সাওয়াবের অধিকারী হব ইনশাআল্লাহ ।

একটি হচ্ছে রোগীর সেবাশুশ্রূষা করার সাওয়াব । অপরটি হচ্ছে এ রকম মুসলমানের সাথে সাক্ষাৎ করতে যাওয়ার সাওয়াব ,

যার ব্যাপারে আমার অন্তরে সঙ্কোচ রয়েছে। এ সঙ্কোচ ও লজ্জা থাকা সত্ত্বেও তার সাথে বন্ধুত্বসুলভ সহমর্মিতার আচরণ করার ওপর পৃথক প্রতিদান পাবো ইনশাআল্লাহ । সুতরাং রোগীর সেবাশুশ্রূষা ও তার সাথে সাক্ষাৎ করতে যাওয়া কোনো মামুলি বিষয় নয় । তাই অত্যন্ত নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে শুধু আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি হাসিলের জন্য রোগীর সেবাশুশ্রূষা করলে ইনশাআল্লাহ অগাধ প্রতিদান পাওয়া যাবে ।

রোগী দেখতে যাওয়ার আদব :
১. সাক্ষাতের সাধারণ আদবগুলো মেনে চলা। যেমন- হালকা শব্দে দরজা নক করা ।
অনুমতি নেয়ার সময় দরজার সামনে না দাঁড়ানো। নিজের স্পষ্ট পরিচয় দেয়া ।
চক্ষুকে অবনত রাখা ইত্যাদি।

২. সাক্ষাতের জন্য উপযুক্ত সময় নির্বাচন করা । খাবারের সময় , বিশ্রামের সময়, ঘুমের সময়, ইবাদতের সময় সাক্ষাৎ করতে না যাওয়া ।

৩. রোগীর মাথার কাছে বসা । তার কপালে হাত দেয়া । তার অবস্থা জিজ্ঞেস করা ।

৪. বারবার সাক্ষাতের জন্য না যাওয়া ।
এতে রোগীর কষ্ট হতে পারে । তবে রোগীর অবস্থা দ্বারা যদি বোঝা যায়,
সাক্ষাৎপ্রার্র্থীর বারবার সাক্ষাতে রোগী তৃপ্তি পায় বা আগ্রহী হয় বা রোগ-যন্ত্রণা কিছুটা হ্রাস পায় , তাহলে বারবার যাওয়া যেতে পারে ।

৫. রোগীর কাছে বেশিক্ষণ অবস্থান না করা । এতে রোগীর নিজের বা পরিবারের লোকদের বিরক্তির কারণ হতে পারে বা তাদের কোনো নিয়মিত কাজে ব্যাঘাত ঘটতে পারে ।

৬. রোগীকে বেশি প্রশ্ন না করা । কেননা অসুস্থাবস্থায় বেশি বেশি প্রশ্ন রোগীর জন্য বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

৭. রোগীর সুস্থতার জন্য দোয়া করা । তার কাছে বসে সূরা নাস, ফালাক ও সূরা ইখলাস পাঠ করা । আরো অনেক দোয়া বর্ণিত আছে । যেমন- আসআলুল্লাহাল আজিম রব্বাল আরশিল আজিম আন ইয়াশফিয়াক । ’ ( সাত বার) ।

৮. অসুস্থ ব্যক্তির সামনে এমন কিছু না বলা ,
যা তাকে চিন্তিত করে তোলে । বরং তাকে সান্ত্বনার বাণী শুনাতে হবে । তার প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করতে হবে ।

রোগীকে সান্ত্বনা প্রদান করা নেকির কাজ । রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন , ‘ যে ব্যক্তি তার মুমিন ভাইকে বিপদে সান্ত্বনা দেবে, আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন তাকে সম্মানের পোশাক পরিধান করাবেন । ( ইবনে মাজাহ : হাদিস নম্বর ১৬০১ ,

সনদ হাসান , ইরওয়াউল গালিল : হাদিস নম্বর ৭৬৪) । তাকে সাহস দিতে হবে । ধৈর্য ধারণ করার উপদেশ দিতে হবে । সম্ভব হলে ধৈর্যের প্রতিদান সম্পর্কে কিছু শোনাতে হবে । এমন কথা বলতে হবে যাতে তার মনোবল শক্তিশালী হয় ।

৯. অসুস্থ ব্যক্তির কাছে নিজের জন্য দোয়া চাইতে হবে। কেননা এটি সুন্নত।

লেখক : প্রাবন্ধিক, শিক্ষক, জামিয়া রহমানিয়া সওতুল হেরা, টঙ্গী, গাজিপুর।
সম্পাদক, মাসিক আল হেরা।

Sunday, December 31, 2017

খৃষ্টীয় নববর্ষ উদযাপন: শরিয়ত কি বলে!

উৎসব পালন জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে একটি সামগ্রিক ফিনমিনন। সুনির্দিষ্ট কোনো দিবসকে স্মরণীয় করে রাখার গভীর বাসনা থেকে, অথবা আনন্দ-উল্লাস প্রকাশ, কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করা ইত্যাদি থেকে জন্ম নেয় বর্ষান্তরে উৎসব পালনের ঘটনা।

আল্লাহ তাআলা মানুষের এ স্বভাবজাত বাসনা সম্পর্কে সুপরিজ্ঞাত। তাই তিনি তা প্রকাশের মার্জিত ও সম্মানজনক পদ্ধতি বিধিবদ্ধ করে দিয়েছেন। সৃষ্টিসংলগ্ন সামগ্রিক প্রজ্ঞাময়তা, পৃথিবীবক্ষে মানবপ্রজন্মের দায়দায়িত্ব, আল্লাহর ইবাদত ও দাসত্বের জিম্মাদারি ইত্যাদি বিবেচনায় রেখেই তিনি দিয়েছেন উৎসব পালনে সম্মানজনক বিধান। আনাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় আগমন করলেন। তাদের ক্রীড়া-উল্লাসের ছিল দুটি দিবস। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,’এ দিবস দুটি কি? ‘ উত্তরে তারা বললেন,’ জাহেলী যুগে দিবস দুটি ক্রীড়া-উল্লাসে কাটাতাম।‘ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,’আল্লাহ তাআলা এ দিবস দুটির পরিবর্তে উত্তম দুটি দিবস তোমাদেরকে দিয়েছেন- ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর। [ আবু দাউদ, আহমদ] 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বকর রা. কে বললেন,
’হে আবু বকর! প্রত্যেক জাতিরই উৎসব রয়েছে, আর এটা আমাদের উৎসব।‘[ বুখারি ]

মুসলিম উম্মাহর ঈদের সাথে আকিদা-বিশ্বাস ও জীবনাদর্শ সংমিশ্রিত, এবং তা বিজাতীয় সকল উৎসব থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন, আকার-প্রকৃতি, ধর্মসংলগ্নতা, জাতীয় অথবা পার্থিব যে ধরনেরই তা হোক না কেন।

পঁচিশে ডিসেম্বর থেকে পৃথিবীময় শুরু হয় খৃষ্টীয় উৎসব যা একত্রিশ ডিসেম্বর নববর্ষীয় মহোৎসবের মাধ্যমে শেষ হয়।

আর মুসলমানরা, সজ্ঞানে অথবা অবচেতনভাবে, আল্লাহ তাদেরকে যে সম্মান ও বৈশিষ্ট্য দিয়েছেন, তা বিশ্রুত হয়ে, এ উৎসবে অংশ নিয়ে থাকে।

বহু বিভিন্ন শরয়ি টেক্সট রয়েছে যা উম্মতে মুহাম্মদীর আলাদা বৈশিষ্ট্যের কথা স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করে এবং অন্যান্য জাতি থেকে তাদেরকে যে স্বতন্ত্রিকতা ও উন্নত অবস্থান নিয়ে চলমান থাকতে হবে সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেয়।

আর এতে আশ্চর্যের কিছু নেই। কেননা এ উম্মত সর্বশেষ ঐশীবার্তাবহক জাতি। যাদের নবী হলেন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং পবিত্র গ্রন্থ হল হল মহাগ্রন্থ আল কুরআন।

আল্লাহ তাআলা এ উম্মতকে সর্বোচ্চ সৌন্দর্যে অভিষিক্ত করেছেন, যখন তিনি ঘোষণা দিয়েছেন: 
( তোমরা হলে সর্বোত্তম উম্মত, যাদেরকে বের করা হয়েছে মানুষের জন্য। তোমরা ভালো কাজের নির্দেশ দেবে ও মন্দ কাজ থেকে বারণ করবে, আর আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে। ) সূরা আল ইমরান: ১১০

সে হিসেবে এ উম্মত হচ্ছে সর্বোত্তম উম্মত। মায়াবিয়া ইবনে হায়দা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,’ 

তোমরা সত্তর উম্মতের সংখ্যা পূর্ণকারী। আর তোমরা এ সত্তর উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম এবং আল্লাহর কাছে অধিক সম্মানিত। [ আহমদ, তিরমিযি, ইবনে মাযাহ ও হাকেম ] 

তিনি আরো বলেছেন,
’জান্নাতবাসীদের একশত বিশ কাতার হবে, তন্মধ্যে এ উম্মত হবে আশি কাতার।‘ [ তিরমিযি, ইবনে মাযাহ ও আহমদ ] 

আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 
’আমরা কিয়ামত দিবসে শেষ ও শুরু, আমরা সর্বাগ্রে জান্নাতে প্রবেশকারী, যদিও তাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে আমাদের পূর্বে, আর এসেছি তাদের পরে। তারা মতানৈক্য করেছে। তারা যে বিষয়ে মতানৈক্য করেছে আল্লাহ আমাদেরকে সে বিষয়ে সঠিক পথ দেখিয়েছেন। এটা সে দিবস যে দিবস সম্পর্কে তারা মতানৈক্য করেছে। আর আমাদেরকে আল্লাহ এ বিষয়ে হিদায়াত দিয়েছেন। অদ্যকার দিবস আমাদের। কালকেরটা ইহুদিদের এবং পরশু হল নাসারাদের।‘ [ বুখারি ও মুসলিম ]

ইবনে কাছীর র. বলেছেন,’ এই উম্মত উত্তম কাজে বিজয়ের ঝাণ্ডাবাহী। এ উম্মতের নবী হল মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যিনি আল্লাহর তাবৎ সৃষ্টির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ, রাসূলদের মধ্যে সমধিক সম্মানিত, আল্লাহ তাকে পরিপূর্ণ শরিয়ত দিয়ে পাঠিয়েছেন, যা অন্য কোনো রাসূলকে দেন নি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পথ ও পদ্ধতি অনুযায়ী অল্প আমল অন্যান্যদের অধিক আমল থেকেও উত্তম।‘ [ তাফসিরুল কুরআনিল আযীম, ২/৯৪ ]

শুদ্ধানুভূতির অভাব, ইমানী দুর্বলতা ইত্যাদির কারণে, বর্তমানযুগের কিছু মুসলমান যীশুখৃষ্টের জন্মতিথি ও নববর্ষের উৎসব ইত্যাদিতে অংশ নিয়ে থাকে, নাসারাদের বেশভূষা, তাদের ধর্মীয় চিহ্ন ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকে, যেমন:

১. ডাক অথবা ইন্টারনেট যোগে শুভেচ্ছা বিনিময়।

২. নাসারাদের সাথে এসব উৎসব পালনে অংশ নেয়া, গির্জায়, হোটেলে, উন্মুক্ত মাঠে অথবা সেট্যালাইট চ্যানেলে।

৩. কৃস্টমাস ট্রি ক্রয়, শিশুদের কাছে প্রিয় বাবানোয়েলের পুতুল ক্রয়, ও ইত্যাদি গিফট হিসেবে নববর্ষের রাত্রিতে প্রদান।

৪. গান-বাজনা, নাচ, অশ্লীলতা, মদ্যপান, মোমবাতি জ্বালিয়ে তার আগুন নেবানো ইত্যাদি কর্মকাণ্ড যা উন্মুক্ত বা ঘরোয়াভাবে করা হয়।

এ উভয় উৎসব, অর্থাৎ যীশুখৃষ্টের জন্মতিথি এবং নববর্ষের উৎসব উভয়টাই উৎসব হিসেবে নেয়া মুসলমানেদের জন্য বৈধ নয়।

যীশুখৃষ্টের জন্মতিথি কুফরসর্বস্ব ধর্মীয় বৈশিষ্ট্যে অবগঠিত একটি দিবস, যেখানে ঈসা আ.কে ঐশিক গুণাবলিসর্বস্ব হওয়া, সৃষ্টিকর্তার মানুষের রূপ পরিগ্রহণ, ছেলে হিসেব আবির্ভাব, ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলে আত্মদান ইত্যাদি ভ্রান্ত বিশ্বাস বিশপ ও খৃষ্টীয় ধর্মগুরুদের কর্তৃক তুমুলভাবে প্রচার করা হয়।

আর দ্বিতীয় দিবসটি হল পার্থিবতা ও অশ্লীলতাসর্বস্ব, যাতে চর্চিত হয় বেলেল্লাপনা, বেহায়াপনা, পাশবিকতাপূর্ণ আচরণ, যা সর্বার্থে মনুষ্য উপযোগিতারহিত। মুমিনের কথা তো এখানে আসতেই পারে না।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে খুবই সচেতন ছিলেন। একটি ঘটনা থেকে এর সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। 

এক ব্যক্তি বুওয়ানা নামক জায়গায় উট যবেহ করার মান্নত মানল। সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলল,’আমি বুওয়ানায় একটি উট যবেহ করার মান্নত করেছি। প্রত্যুত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,’ সেখানে কি জাহেলীযুগের কোনো মূর্তি পূজা হত? তারা বললেন,’ না।‘ তিনি বললেন,’সেখানে কি তাদের কোনো উৎসব হত? ‘ তারা বললেন,’ না।‘ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,’তোমার মান্নত পুরন করো। আর জেনে রাখো, আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ হয় এমন মান্নত পূর্ণ করতে নেই এবং এমন মান্নতও পুরন করতে নেই মানুষ যার অধিকার রাখে না।‘ [ আবু দাউদ ]

আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,’যে ব্যক্তি মুশরিকদের দেশে বাড়ি তৈরি করল, তাদের উৎসব-দিবস পালন করল এবং এ অবস্থায় সে মারা গেল, তবে তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে। [ সুনানে বাইহাকি ৯/২৩৪ ]

এধরনের উৎসব পালন অবৈধ হওয়ার কারণ বাহ্যিক ধরন-ধারণে সাদৃশ্যগ্রহণ ও আন্তর বিশ্বাস এদুয়ের মাঝে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। 

শায়খুল ইসলাম ইবেন তাইমিয়া র. তার প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ( ইকতেযাউসিরাতিল মুসতাকিম মুখালাফাতু আসহাবিল জাহীম) - এ বলেন,’সিরাতুল মুসতাকীম হৃদয়ে অবস্থিত আন্তর বিষয়; যেমন আকিদা-বিশ্বাস, ইচ্ছা ইত্যাদি এবং বাহ্যিক বিষয়; যেমন কথা-কাজ, হতে পারে তা ইবাদত, হতে পারে তা খাবার, পোশাক, বিবাহ-শাদি, বাড়ি-ঘর, সম্মিলন ও বিচ্ছেদ, সফর-আরোহণ ইত্যাদি সংক্রান্ত। এইসব আন্তর ও বাহ্যিক বিষয়ের মাঝে সম্পর্ক রয়েছে। কেননা হৃদয়জগতে যে অনুভূতি আন্দোলিত হয় তা বিভিন্নভাবে বাহ্যদৃশ্যে রূপায়িত হতে বাধ্য, আবার বাহ্যিক কাজকর্মও হৃদয়ে তৎসংলগ্ন অনুভূতি জাগ্রত করে থাকে।

আর আল্লাহ তাআলা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণ করেছেন হিকমতসহ, যা হল তাঁর সুন্নত ও আদর্শ, এবং তিনি তাঁর জন্য বিধিবদ্ধ করেছেন সুনির্দিষ্ট পথ ও পদ্ধতি। এই হিকমতের একটি হল যে তিনি রাসূলের জন্য এমন কথা ও কাজ বিধিবদ্ধ করেছেন, যা অভিশপ্তদের পথ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। অতঃপর তিনি বাহ্যিক বেশভূষায় তাদের উল্টো করতে বলেছেন, যদিও অনেকের কাছে বাহ্যত এতে কোনো বিচ্যুতি মনে হয় না। তিনি এরূপ করেছেন কয়েকটি কারণে। কারণগুলোর একটি হল, বাহ্যিক বেশভূষায় সাদৃশ্যগ্রহণ, যে সাদৃশ্য গ্রহণ করল এবং যার সাদৃশ্য গ্রহণ করা হল, এদুজনের মাঝে ধরন-ধারণে একটা সম্পর্ক কায়েম করে দেয়, যা আমল-আখলাকে সম্মতিজ্ঞাপন পর্যন্ত নিয়ে যায়। এ বিষয়টি সহজেই অনুমেয়; যে ব্যক্তি আলেমদের পোশাক গ্রহণ করে সে নিজেকে আলেমদের সাথে সম্পৃক্ত বলে অনুভব করতে থাকে। আর যে ব্যক্তি সৈনিকদের পোশাক পরে তার হৃদয়ে সৈনিকসংলগ্ন ভাব জন্মে। তার মেজাজও সৈনিকতুল্য হয়ে যায়। যদি না এ পথে কোনো বাধা থাকে।‘ 

ইবনে তাইমিয়া র. আরো বলেন,’ এ হিকমতের মধ্যে আরেকটি হল, বাহ্যিক ক্ষেত্রে উল্টো করা ভিন্নতা ও বিচ্ছেদ সৃষ্টির কারণ হয়, যা করলে আল্লাহ নারাজ হন এবং যা কিছু পথহারা করে দেয় তা থেকে দূরে রাখে এবং হিদায়াতপ্রাপ্ত ও আল্লাহর সন্তুষ্টিপ্রাপ্তদের প্রতি আগ্র্র্রহী করে। আর এর দ্বারা মুমিন ও আল্লাহর শত্রুদের মাঝে সম্পর্কচ্ছেদের যে বিধান আল্লাহ তাআলা রেখেছেন তা বাস্তবায়িত হয়। আর হৃদয় যত বেশি জাগ্রত থাকবে, প্রকৃত ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানের অধিকারি হবে- এখানে প্রকৃত ইসলাম বোজাচ্ছি, সাধারণভাবে মুসলমানতুল্য বেশভূষা ও বিশ্বাস পালনের কথা বলছি না।- ততোই বাহ্যত ও বিশ্বাসগতভাবে ইহুদি নাসারাদের থেকে আলাদা থাকার অনুভূতি পূর্ণতা পাবে। আর তাদের আচার-অভ্যাস, যা অনেক মুসলমানের মধ্যেই পাওয়া যায় তা থেকে দূরে থাকার মানসিকতা তৈরি হবে। উল্লিখিত হিকমতের মধ্যে আরেকটি হল, প্রকাশ্য বেশভূষায় সাদৃশ্যগহণ বাহ্যত মিলমিলাপ ও সংমিশ্রণ-সম্মিলন ঘটানোর কারণ হয়। হেদায়াতপ্রাপ্ত মুমিন এবং অভিশপ্তদের মাঝে ভিন্নতা ও বৈশিষ্ট্যের দেয়াল উঠে যায়। ধর্মীয় বিষয়ে নয় বরং সাধারণ ক্ষেত্রে তাদের সাদৃশ্যগ্রহণের বিষয়টি যদি এরূপ হয়, তাহলে যেসব বিষয় বিজাতীদের কাফের হওয়ার কারণ সেসব বিষয়ের ক্ষেত্রে তাদের অনুকরণের পাপ-অপরাধ তাদের পাপের মাত্রানুযায়ী নির্ধারিত হবে। এই মূলনীতিটি সবাইকে অনুধাবন করতে হবে।‘ [ ১/৮০-৮২ ]

ইমানাদৃপ্ত স্পর্শকাতর মন ও তাওহীদী ভাবাদর্শে জাগ্রত হৃদয় ব্যতীত এসব অর্থ ও ভাব হৃদয়ঙ্গম করা সম্ভব নয়। আর যারা তথাকথিত ধার্মিক, যাদের ইমানী অনুভূতি কদর্যতায় আক্রান্ত, এসব কথা তাদের কাছে অর্থহীন। বিজাতির সাদৃশ্যগ্রহণ এদের কাছে আদৌ কোনো গুরুত্বের বিষয় নয়। তারা নির্দ্বিধায় অভিবাদন-শুভেচ্ছা বিনিময় করে যায়। তারা এসব উৎসব অনুষ্ঠানে অবলীলায় আমোদ স্ফূর্তি প্রকাশ করে যায়।

ইবনুল কাইয়েম র. আহকামু আহলিয্ যিম্মাহ ( যিম্মিদের বিধান) গ্রন্থে বলেন,’ বিজাতিদের নিজস্ব কুফুরি নিদর্শনকেন্দ্রিক কোনো উপলক্ষ্যে শুভেচ্ছা বিনিময়, যেমন তাদের ধর্মীয় উৎসব বা রোজার সময় বলা,’শুভ উৎসব ‘ অথবা ’এ উৎসবে আপনি আনন্দ-আপ্লুত হোন, ‘ ইত্যাদি। এ ধরনের শুভেচ্ছাবার্তা প্রদানকারী যদি কুফর থেকে পবিত্র থাকে তাহলে তা হারাম বলে বিবেচিত হবে। এটা ক্রসচিহ্ন সিজদাকারীকে শুভেচ্ছা প্রদানের মতোই। এটা বরং আল্লাহর কাছে অধিক পাপ বলে পরিগণিত। এটা আল্লাহর কাছে মদ্যপান, মানবহত্যা, যিনা ইত্যাদির চেয়েও অধিক ঘৃণিত। দীন-ধর্মে যাদের কোনো অংশ নেই তারাই এসব কর্মে লিপ্ত হয়ে থাকে। তারা কত ঘৃণার কাজ করছে তারা নিজেরাই জানে না। যে ব্যক্তি কোনো পাপীকে পাপকর্ম সম্পাদনের পর শুভেচ্ছা জানাল, অথবা কোনো বিদআতপন্থীকে বিদআতকর্ম সম্পাদনের পর শুভেচ্ছা জানাল সে আল্লাহর ঘৃণা ও রোষের উপযোগী হল। [ আহকামু আহলিয্ যিম্মা:২০৫-২০৬ ]

সমাপ্ত
লেখক : ড. আহমদ বিন আব্দুর রহমান আল কাজী
অনুবাদক : আলী হাসান তৈয়ব

মারওয়ান ইবনুল হাকাম (রাদি:)!

মাওলানা আতিক উল্লাহ
  • আচ্ছা, উমার ইবনে আবদুল আযীয রহ. সম্পর্কে আপনার মতামত কী?
  • সর্বকালের সেরা ন্যায়পরায়ন শাসকদের অন্যতম!
  • তাহলে তিনি যদি এমন ন্যায়পরায়ন হয়ে থাকেন, তার বাবা কেমন হবেন?
  • বাবা ভাল না হলে কি ছেলে এমন হতে পারেন?
  • তার দাদা?
  • তার দাদাও অবশ্যই ভাল হবেন! তিনি কে?

মারওয়ান ইবনুল হাকাম রা.। 
কিন্তু তার সম্পর্কে যে আমরা নানামুখী কথা পড়েছি?
আপনি কী পড়েছেন না পড়েছেন তার দায় একজন সাহাবীর কাঁধে ফেলবেন কেন? দুষ্ট-ভ্রষ্ট লেখকের ঘাড়ে ফেলুন!

মারওয়ান ইবনুল হাকাম। একজন সাহাবী রা.। যদি বলি তিনি হলেন ইসলামী ইতিহাসের সবচেয়ে বিতর্কিত ব্যক্তি, খুব একটা বাড়িয়ে বলা হবে বলে মনে হয় না। উসমান রা., মুয়াবিয়া রা ও মারওয়ান রা: এই তিনজনের আলোচনা ছাড়া ইসলামের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ অসম্পূর্ণই থেকে যায় বলা যায়।

অনেকদিন ধরেই হযরত মারওয়ান রা.-এর সাথে লেগে আছি। উসমান রা.-এর মতো মানুষ কি যাকে তাকে কলমচি নিয়োগ দিতে পারেন? মুয়াবিয়া রা.-এর মতো ন্যায়পরায়ন মানুষ যাকে একাধিক বার মদীনার গভর্নর নিয়োগ দেন, তিনি কি হেলাফেলার লোক হতে পারেন?এই প্রশ্নগুলোই কুরে কুরে খাচ্ছিল বিবেকটাতে! প্রশ্নগুলো ছিলো আবেগপ্রসূত! সাহাবীদের প্রতি শ্রদ্ধা থেকে উৎসারিত! কিন্তু আবেগ-শ্রদ্ধা তো নিজের কাছে, অন্যরা সেটা মানবে কেন? তারা তো ছুতানাতা পেলেই সমালোচনা করতে লেগে পড়ে!

প্রথমেই তার কিছু বৈশিষ্ট্য ক্রমিকাকারে তুলে ধরা যাক:
(এক) আবদে মানাফে গিয়ে নবীজি সা. ও মারওয়ানের বংশধারা মিলিত হয়েছে। তিনি কুরাইশ বংশের সম্ভ্রান্ত শাখা ‘উমাইয়া’-এর সন্তান। উসমান এবং মুয়াবিয়া রা.ও এই শাখার মানুষ।

(দুই) জন্ম-মৃত্যু ২-৬৫ হিজরী। ৬২৩-৬৮৫ ঈসায়ী। অর্থাৎ নবীজি মক্কা ছেড়ে মদীনায় হিজরত করার দুই বছর পর জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার মানে দাঁড়াল, নবীজির ওফাতের সময় তার বয়েস ছিল আট। জন্ম হয়েছে মক্কায়। মৃত্যু দিমাশকে। মক্কা বিজয় হয়েছে অষ্টম হিজরীতে। এর প্রেক্ষিতে বলা যায়, ছয় বছর বয়েসে নবীজিকে দেখার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন। মদীনায় এসেছিলেন নবীজির ওফাতের পর। এমনিতে বাবার সাথে তায়েফে থাকতেন। জীবনের বেশির ভাগ সময় মদীনায় কেটেছে। এযীদের শাসনকালে তাকে মদীনা থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। কারন মদীনা তখন আবদুল্লাহ ইবনে যোবায়ের রা.-এর খিলাফতের অধীন হয়ে পড়েছিল।

(তিন) তিনি নবীজি সা. থেকে একটা হাদীস বর্ণনা করেছেন। হোদায়বিয়ার সন্ধি সম্পর্কিত। ইমাম বুখারী রহ. তার সহীহে হাদীসটা এনেছেন। চার বিখ্যাত সুনানের কিতাবেও তার হাদীস আনা হয়েছে। ইমাম বুখারী রহ. যার হাদীস তার গ্রন্থে এনেছেন, তার সম্পর্কে আর কোনও সনদ লাগে? যারা তার সম্পর্কে এটাসেটা বলে-লিখে বেড়ায় তাদের নিজেদের গায়েই কি থুতু গিয়ে পড়ে না!

(চার) তিনি বড় বড় সাহাবী থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। উমার, উসমান, আলি, যায়েদ বিন সাবিত বুসরাহ বিনতে সাফওয়ান রা. থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। শেষোক্ত মহিলা সাহাবীটি ছিলেন তার আদরের খালা।

মারওয়ানের কাছ থেকে বড় বড় তাবেয়ী হাদীস বর্ণনা করেছেন। এমনকি শী‘আরা যাকে তাদের ইমাম মানে, আলি বিন হুসাইন (যায়নুল আবেদীন) রহ.-ও তার থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। শী‘আদের কথা মতো মারওয়ান যদি এতই খারাপ হতেন, তাদের একজন প্রধান ইমাম কিভাবে হাদীস বর্ণনা করলেন?

সাহল বিন সা‘দ রা.একজন বিশিষ্ট সাহাবী। তিনিও মারওয়ান থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
(পাঁচ) কুরআন কারীম বিষয়ে মারওয়ান রা.-এর ভিন্নমাত্রার পান্ডিত্য ছিল। মদীনার থাকার দরুন ইলমুল ফিকহ ও ইলমুল হাদীসেও অগাধ দখল এসে গিয়েছিল। হালাল-হারাম বাছবিছার করে চলতেন। ফিকহের ক্ষেত্রে বড় বড় সাহাবী তার মতামতের মূল্য দিতেন। ইমাম মালেক

(ছয়) মুয়াবিয়া রা.তাকে একাধিকবার মদীনার গভর্নর নিয়োগ করেছিলেন। সে সুবাদে মারওয়ান দীর্ঘদিন হজের সময় আমীরুল হজ হিশেবে নিয়োজিত ছিলেন। যে কেউ এই পদে বসতে পারে না। নবীজি সা. থেকে শুরু করে চার খলীফা এই পদ অলংকৃত করে গিয়েছিলেন। তার নেতৃত্বে বড় বড় সাহাবী হজ করেছেন। কেউ কোনও আপত্তি তোলেন নি।

(সাত) বড় দানশীল মানুষ ছিলেন। গভর্নর হয়েও সাধারন মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে দাঁড়াতেন। বায়তুল মাল থেকে যথাসাধ্য দেয়ার চেষ্টা করতেন। ব্যক্তিগত ভান্ডার থেকেও মানুষকে সাহায্য করতে পিছপা হতেন না। কারবালার ঘটনার পর, আলি বিন হুসাইন (যায়নুল আবেদীন) রহ. মদীনায় ফিরে এলেন। নিঃস্ব অবস্থায়। অসহায় হয়ে। মারওয়ান তখন আলি বিন হুসাইনকে ৬ হাজার দীনার (স্বর্ণমুদ্রা) করয দিয়েছেন। মৃত্যুর সময় বড় ছেলে আবদুল মালিক বিন মারওয়ানকে ওসীয়ত করে গেছেন:

তুমি আলি বিন হুসাইনের কাছে ছয় হাজার দীনার করয কখনোই ফেরত চাইবে না!

(আট) হাসান ও হুসাইন রা. মদীনায় দীর্ঘদিন মাওয়ানের ইমামতীতে নামায পড়েছেন। কখনো আপত্তি তোলেন নি। বড় বড় সাহাবীও তাকে ইমাম হিশেবে মেনে নিতে কোনও প্রকারের আপত্তি তোলেন নি।

(নয়) মারওয়ানের প্রতি আলি রা.-এরও বিশেষ নযর ছিল। জঙ্গেজামাল বা উষ্ট্রীযুদ্ধের দিন, আলি রা. বারবার মারওয়ান সম্পর্কে খোঁজ করছিলেন। কাছের লোকেরা অবাক হয়ে জানতে চাইলো:
আপনি তার জন্যে এমন উতলা হলেন কেন? সে তো আপনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিয়েছে?
তা নিক! তার প্রতি আমার এক ধরনের স্নেহ আছে। সে কুরাইশ যুবকদের অন্যতম সর্দার!

(দশ) প্রশাসনিক ক্ষেত্রে মারওয়ানের আদর্শ ছিলেন উমার রা.। তিনি পদে পদে উমার রা.-এর গৃহীত পদক্ষেপ অনুসরনের চেষ্টা করতেন। গভীর বুদ্ধিমত্তা ও প্রজ্ঞার অধিকারী ছিলেন। গায়ের জোরে কিছু চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতেন না। তার অন্যতম একটা বৈশিষ্ট্য ছিল মুশাওয়ারা। কোনও বিষয়ে নিজে সিদ্ধান্ত নিতে অপারগ হয়ে পড়লে, মদীনায় বাস করা সাহাবীদের ও মুরুব্বীস্থানীয় ব্যক্তিবর্গকে জমায়েত করে, তাদের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিতেন।
মদীনায় তখন মাপ-পরিমাপের জন্যে বিভিন্ন রকের বাটখারার প্রচলন ছিল। তিনি সবার সম্মতিক্রমে একটা সুনির্দিষ্ট বাটখারা ব্যবহারে অভ্যস্ত করে তুলেছিলেন। সেটার নামই হয়ে গিয়েছিল ‘মারওয়ানী বাটখারা’।

(এগার) তিনি মদীনায় থাকায় বড় একটা সুবিধা এই হয়েছিল: তার দুই ছেলে আবদুল মালিক বিন মারওয়ান ও আবদুল আযীয বিন মারওয়ান এখানকার ইলমী ও আমলী পরিবেশে বেড়ে উঠতে পেরেছিলেন। আরও সুখের কথা হলো: নাতি উমার বিন আবদুল আযীযও এমন বিরল সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন জন্মসূত্রেই। ইসলামের ইতিহাসে এর গুরুত্ব অপরিসীম! উমার বিন আবদুল আযীয মদীনায় শৈশব কাটানো, আল্লাহরই গায়েবী বন্দোবস্ত!

(বারো) খেলাফতে বনি উমাইয়ার মেয়াদকাল ছিল ৪১-১৩২ হিজরী। ৬৬২-৭৫০ ঈসায়ী। মুয়াবিয়ার রা.-এর নাতি দ্বিতীয় মুয়াবিয়ার মৃত্যুর পর, তার উপযুক্ত কোনও সন্তান ছিল না খলীফা হওয়ার মতো। বংশের মধ্যে একমাত্র উপযুক্ত ছিলেন মারওয়ান বিন হাকাম। তাকে খলীফা নির্বাচিত করা হলো। তার শাসনকাল খুবই সংক্ষিপ্ত। এক বছরেরও কম ,মাত্র নয়মাসের। সংক্ষিপ্ত হলে কী হবে, তিনি এর মধ্যেই উমাইয়া খিলাফাহকে শক্ত একটা ভিতের ওপর দাঁড় করিয়ে দিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন। খেলাফতে রাশেদার সাথে থাকার বরকত, মুয়বিয়া রা.-এর সঙ্গ তাকে মেধা-তাকওয়াকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিল।

(তেরো) মারওয়ান যখন খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহন করেন, তখন অবস্থা ছিল অত্যন্ত শোচনীয়। মক্কায় আবদুল্লাহ ইবনে যোবায়ের রা.-এর খিলাফত দোর্দন্ড প্রতাপে চলছে। মুসলিম জাহানের বেশির ভাগ অঞ্চল তার হাতে বায়আত নিয়েছে। দ্বিতীয় মুয়াবিয়ার মৃত্যুর পর উমাইয়াদের প্রধান দুর্গ দিমাশকের বিরাট একটা অংশও ইবনে যোবায়ের রা.-এর অধীনে চলে গিয়েছিল। খোদ দিমাশকের গভর্নরও বিপক্ষে চলে গিয়েছিলেন। এহেন নড়বড়ে অবস্থায় ঘুরে দাঁড়ানো সাধারন ব্যাপার নয়। হয়তো পারতেনও না, কিন্তু মদীনার কিছু অভিজ্ঞ যোদ্ধা ইবনে যোবায়েরের হাতে দৌড়ানি খেয়ে দিমাশকে এসে আশ্রয় নিয়েছিল। তারাই বুদ্ধি-পরামর্শ-সাহস যুগিয়ে মারওয়ানকে আগে বাড়তে সাহায্য করেছে!

(চৌদ্দ) মারওয়ান ইবনুল হাকাম ছিলেন সাহসী যোদ্ধা। শত বিপদেও ধৈর্য ও সাহস কোনওটাই হারাতেন না। উসমান রা.-এর ওপর যখন কুচক্রীরা হামলা করলো, মারওয়ান অসম সাহসিকতার সাথে তাদের মোকাবেলা করেছিলেন। পিছপা না হলে, খলীফাকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে তরবারি পরিচালনা করেছিলেন।

(পনের) মারওয়ান ইবনুল হাকামকে বলা হয় উমাইয়া খিলাফতের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাতা। তৃতীয় খলীফা মুয়াবিয়ার পর কার্যত সবকিছু ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছিল। মারওয়ান শুরুতেই কঠোরহস্তে দিমাশককে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন। তারপর নযর দিলেন মিসরের দিকে। গুরুত্বপূর্ণ এই শহরকে করায়ত্ত করে, সেখানে ছোট ছেলে আবদুল আযীযকে বসিয়ে এলেন। এবার মনোযোগ দিলেন ইরাকের দিকে। আবদুল্লাহ ইবনে যোবায়ের রা.-এর শক্ত ঘাঁটি! বিশ্বস্ত সেনাপতি ওবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদকে প্রধান করে একটা বাহিনী পাঠালেন। বাহিনী ইরাকে পৌঁছার আগেই খবর পেলো: মারওয়ান ইবনুল হাকাম ইন্তেকাল করেছেন। বড় ছেলে আবদুল মালিক বিন মারওয়ান পরবর্তী খলীফা নির্বাচিত হয়েছে। মৃত্যুকালে তার বয়েস ছিল ৬৩ বছর।

ইবনে খালদুনের মতে: মারওয়ান সব সময় সত্যন্ধানী ছিলেন।
আবু বকর ইবনুল আরবীর মতে: মারওয়ান ছিলেন ন্যায়পরায়ণ। উম্মাহর সম্মানিত ব্যক্তিদের অন্যতম।

এতক্ষণ তো তার সম্পর্কে কিঞ্চিত ধারনা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এবার মূল আলোচনায় আসা যাক:
প্রথম অভিযোগ:
নবীজি সা. হাকাম অর্থাৎ মারওয়ানের পিতাকে মক্কা থেকে বহিষ্কার করে তায়েফে নির্বাসিত করেছিলেন।

উত্তর: শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. এ-অভিযোগকে বানোয়াট গল্প বলে আখ্যায়িত করেছেন। মক্কা বিজয়ের পর হাকাম ইসলাম গ্রহণ করার পর, স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়েই তায়েফে বসবাস করতে গিয়েছিলেন। থাকার জন্যে তায়েফ খুবই মনোরম স্থান!
ইবনে তাইমিয়া ছাড়া আরও অনেকেও বলেছেন, নির্বাসনের ঘটনা পুরোটাই বানোয়াট! এই অপবাদপূর্ণ ‘বর্ণনাগুলোর’ একটাও সহীহ নয়।

দ্বিতীয় অভিযোগ:
আহলে বাইতের সাথে শত্রুতা!

উত্তর: এটা শী‘আদের চরম মিথ্যাচার। আগেই বলা হয়েছে, হযরত আলি রা. ও অলি বিন হুসাইনের সাথে মারওয়ানের সম্পর্ক কেমন ছিল!
ইবনে তাইমিয়া রহ.-এর মতে, মারওয়ান আলি বিন হুসাইনের শিক্ষকও ছিলেন।
সুতরাং এখানে শত্রুতার প্রশ্ন কোত্থেকে আসে?

তৃতীয় অভিযোগ:
খলীফার সীলমোহর ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার!

উত্তর: আবদুল্লাহ ইবনে সাবা ও তার অনুসারীরা একটা কথা বেশ ফলাও করে প্রচার করেছিল: মারওয়ান খলীফার সীল চুরি করে, মিসরের গভর্ননের কাছে চিঠি লিখেছিল। চিঠিতে বলা হয়েছিল: মুহাম্মাদ বিন আবু বাকর ও তার সাথীদেরকে যেন হত্যা করা হয়!

এটাও ইহুদির বাচ্চার উর্বর মস্তিস্কের আবিষ্কার। না হলে ইরাকে যে প্রতিনিধি দল চিঠি গিয়ে গিয়েছিল, তাদের গন্তব্য ছিল পূর্ব দিকে। আরেক দলের গন্তব্য ছিল পশ্চিম দিকে! ঠিক তিনদিন পর উভয় দল কিভাবে একসাথে মদীনায় জমা হতে পারলেঅ! মিসরের চিঠিতে হত্যার ষড়যন্ত্রের কথা ইরাকীরা কিভাবে জানতে পারলো? তাদের তো ইরাক পৌঁছে যাবার কথা?

ষড়যন্ত্রকারীরা শুধু উসমান রা.-এর নামেই চিঠি লিখে নি, আলি, আয়েশা ও বড় বড় সাহাবীদের নাম ভাঙিয়েও ভূয়া চিঠি লিখে বিভিন্ন শহরে পাঠিয়েছিল। যারা এমন জালিয়াতি করতে পারে, তাদের পক্ষে কি মারওয়ানকে বিপদে ফেলার জন্যে আর দুটা ভূয়া চিঠি লেখা কি অসম্ভব?

আর মারওয়ানের ওপর তাদের আক্রোশ থাকার কারণ হলো, তিনি খলীফাকে আগলে রাখতেন। যোগ্য কলমচির মতোই আমানতদারিতার সাথে দায়িত্ব পালন করতেন। এটাই ইহুদির দোসরদের চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছিল।

চতুর্থ অভিযোগ:
তালহা রা.কে হত্যা!

উত্তর: এই মিথ্যা অভিযোগটা ছড়িয়েছে ওয়াকেদীর বর্ণনা থেকে। জঙ্গে জামালের দিন যুদ্ধশেষে মারওয়ান দেখলো তালহা রা.একদল লোকের মাঝে আছে। তখন মারওয়ান চিৎকার করে বলে উঠলো:

আল্লাহর কসম! উসমানের রক্তের জন্যে এই লোক দায়ী!
এরপর তীর ছুঁড়ে তালহাকে হত্যা করেছে।
কতো বড় মিথ্যাচার! কয়েকটা বিষয় তুলে ধরলেই বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যাবে:

(ক): জঙ্গে জামালের দিন তালহা কার পক্ষে ছিল?
আশেয়া রা.-এর পক্ষে।
মারওয়ান কার পক্ষে ছিল?
আয়েশা রা.-এর পক্ষে!
তাহলে দু’জনেই একপক্ষে থেকে এতক্ষণ আলির বিরুদ্ধে লড়াই করলো, পরাজিত হয়ে যে যার জান বাঁচাতে ব্যস্ত, এহেন পরিস্থিতিতে মারওয়ান কোন বুদ্ধিতে হত্যা করতে যাবে তালহাকে?

(খ): ওয়াকেদীর বর্ণনা মতে, তালহাকে দেখেই মারওয়ান চিৎকার করে উঠেছিল! বলেছিল: উসমান হত্যার দোসর! কেন এর আগে দেখেনি? একদলে যুদ্ধ করলো, শলা-পরামর্শ করলো, তবুও দেখা হয়নি?

(গ): আর তালহা রা. যে উসমান হত্যার তীব্র বিরোধী ছিলেন সেটা কি মারওয়ানের জানা ছিল না? মারওয়ান তো সব সময় উসমানের কাছেই ছিলেন। তালহা রা. নিজের ছেলে মুহাম্মাদকে উসমান রা.-এর নিরাপত্তাবিধান করার জন্যে পাঠিয়েছেন, এটা বুঝি মারওয়ানের দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে? উসমান রা. শহীদ হওয়ার পর, এই অন্যায় হত্যার বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে তালহা রা.-ই তো অগ্রণীদের মধ্যে ছিলেন!

আসলে মারওয়ান বিষয়ক বর্ণনাগুলো মিথ্যা। সবগুলোতেই শী‘আ না হয় মিথ্যা রাবী আছে।

পঞ্চম অভিযোগ:
খুতবা পরিবর্তন!

উত্তর: এই অভিযোগ সত্যি। ঈদের দিন আগে নামায পরে খুতবা! কিন্তু মারওয়ানের যুক্তি ছিল নামায পড়ে মানুষ খোতবা শোনার অপেক্ষা না করেই চলে যায়। খোতবায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা থাকে, সবার শোনা দরকার! তাই খুতবাটা আগে হলেই ভাল! তার এই যুক্তি সঠিক নয়। ইসলামের কিছু বিষয় আছে ‘তাওকীফি’ অর্থাৎ আল্লাহকর্তৃক নির্ধারিত। এর কোনও পরিবর্তন নেই। পরে খুতবা দেয়ার বিষয়টাও এমন।

তবে মারওয়ানকে বিষয়টা খুলে বলার পর, তিনি খুতবা নামাযের আগে চালু রেখেছিলেন, এমন কোনও প্রমাণ নেই।

ষষ্ঠ অভিযোগ:
আবদুল্লাহ ইবনে যোবায়ের রা.-এর বিরুদ্ধে সৈন্য পরিচালনা।

উত্তর: ইবনে হাযম মুহাল্লা কিতাবে লিখেছেন:
মুসলমানদের মধ্যে সর্বপ্রথম বিভেদ সৃষ্টি করে আলাদা রাষ্ট্য কায়েম করেন, মারওয়ান! তিনি ইবনে যোবায়েরের বিরুদ্ধে বের হয়েছেন! এছাড়া তার সবই ভাল!
অভিজ্ঞজনেরা ইবনে হাযমের এই অভিযোগকে খন্ডন করে বলেন:

মারওয়ান কিছুতেই প্রথম বিভেদসৃষ্টিকারী নন! উল্টো ইবনে যোবায়েরের ওপরই কেউ কেউ আপত্তিটা তোলেন! তিনি ইয়াযিদের বিরুদ্ধে সসৈন্যে বের হয়েছিলেন। অথচ অবস্থা-পরিস্থিতি যাই হোক, বলতে গেলে একপ্রকার পুরো উম্মাহই ইয়াযিদের হাতে বায়আত গ্রহণ করেছিলো। ৬০জন বড় বড় সাহাবীও ইয়াযিদের হাতে বায়আত গ্রহণ করেছিলেন!

তারা ইয়াযিদকে বায়আত দিলেও ইবনে যোবায়ের বায়আত দেন নি! তাই তার পক্ষে ইয়াযিদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা অবৈধ বলা যাবে না!

তাহলে একই যুক্তি তো মারওয়ানের ক্ষেত্রেও খাটে! তিনিও কি ইবনে যোবায়েরের হাতে বায়আত দিয়েছিলেন? না দেন নি!

তদুপরি মারওয়ান মদীনার বৈধ গভর্নর থাকাবস্থাতেই, ইবনে যোবয়ের রা. তাকে মদীনা থেকে বের করে দিয়েছিলেন। সে হিশেবে তিনি তার অধিকার ফিরে পেতে অভিযান চালাতেই পারেন। আর ততদিনে মারওয়ান নিজেই খলীফা হয়ে গিয়েছিলেন। দেশের ঐক্য প্রতিষ্ঠিত করতে এই অভিযান পারিচালনা জরুরী ছিল!

আর আবদুল্লাহ ইবনে উমার ও আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.-এর মতো সাহাবীগন ইবনে যোবায়ের রা.-এর খেলাফতকে সমর্থন জানাননি! পাশাপাশি এটা ভুলে গেলেও চলবে না, ইবনে যোবায়ের একজন সাহাবী ছিলেন! তার চিন্তাও একেবারে ফেলনা নয়! ইবনে যোবায়ের রা.কে নিয়ে না হয় আরেক দিন হবে!

মারওয়ান রা. সম্পর্কিত অনেক বর্ণনা আছে। বেশির ভাগই তার নিন্দায়। সেগুলোর সনদের অসারতা প্রমাণ করতে গেলে, বিশাল বই হয়ে যাবে।
আগ্রহীদের জন্যে লিংক দেয়া রইল। সময় করে দেখে নিলেই হবে।

Saturday, December 30, 2017

২০ মিনিটে ১৯ বার কোরআন খতম করার ছাওয়াব!

সূরা ফাতিহা : তিনবার তিলাওয়াত করলে, কোরআন কারীম দুই বার খতম করার ছাওয়াব। (তাফসীরে মাযহারী, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা-১৫)
সূরা ফাতিহা-
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ (1) الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ (2) الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ (3) مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ (4) إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ (5) اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ (6) صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ (7)


সূরা নাস্‌র : চারবার তিলাওয়াত করলে, এক বার কোরআন খতম করার ছাওয়াব। (তিরমিযী, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা: ১১৭)
সূরা নাস্‌র-
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ (1) وَرَأَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُونَ فِي دِينِ اللَّهِ أَفْوَاجًا (2) فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ ۚ إِنَّهُ كَانَ تَوَّابًا (3)


সূরা কাফিরূন : চারবার তিলাওয়াত করলে, একবার কোরআন খতম করার ছাওয়াব। (তিরমিযী, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা: ১১৭)
সূরা কাফিরূন-
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ (1) لَا أَعْبُدُ مَا تَعْبُدُونَ (2) وَلَا أَنتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ (3) وَلَا أَنَا عَابِدٌ مَّا عَبَدتُّمْ (4) وَلَا أَنتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ (5) لَكُمْ دِينُكُمْ وَلِيَ دِينِ (6)

সূরা ক্বদ্‌র্ : চারবার তিলাওয়াত করলে, একবার কোরআন খতম করার ছাওয়াব। (দুররে মানছূর, ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃষ্ঠা: ৬৮০)
সূরা ক্বদ্‌র্-
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ (1) وَمَا أَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ (2) لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ (3) تَنَزَّلُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِم مِّن كُلِّ أَمْرٍ (4) سَلَامٌ هِيَ حَتَّىٰ مَطْلَعِ الْفَجْرِ (5)

সূরা যিলযাল : দুইবার তিলাওয়াত করলে, এক বার কোরআন খতম করার ছাওয়াব। (তিরমিযী, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা: ১১৭)
সূরা যিলযাল-
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
إِذَا زُلْزِلَتِ الْأَرْضُ زِلْزَالَهَا (1) وَأَخْرَجَتِ الْأَرْضُ أَثْقَالَهَا (2) وَقَالَ الْإِنسَانُ مَا لَهَا (3) يَوْمَئِذٍ تُحَدِّثُ أَخْبَارَهَا (4) بِأَنَّ رَبَّكَ أَوْحَىٰ لَهَا (5) يَوْمَئِذٍ يَصْدُرُ النَّاسُ أَشْتَاتًا لِّيُرَوْا أَعْمَالَهُمْ (6) فَمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ (7) وَمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ (8)

সূরা আদিয়াত : দুইবার তিলাওয়াত করলে, একবার কোরআন খতম করার ছাওয়াব। (দুররে মানছূর, ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃষ্ঠা: ৬৯৫)
সূরা আদিয়াত-
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
وَالْعَادِيَاتِ ضَبْحًا (1) فَالْمُورِيَاتِ قَدْحًا (2) فَالْمُغِيرَاتِ صُبْحًا (3) فَأَثَرْنَ بِهِ نَقْعًا (4) فَوَسَطْنَ بِهِ جَمْعًا (5)

আয়াতুল কুরছী : চারবার তিলাওয়াত করলে, একবার কোরআন খতম করার ছাওয়াব। (তাফসীরের মাযহারী, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা: ৩১)
আয়াতুল কুরছী-
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ ۚ لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ ۚ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۗ مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِندَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ ۚ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ ۖ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ ۚ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ ۖ وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا ۚ وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ (255)

সূরা ইয়াসিন : একবার তিলাওয়াত করলে, দশবার কোরআন খতম করার ছাওয়াব। (তিরমিযী, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা: ১১৬)
(সূরা ইয়াসিন লম্বা হওয়ায় দেয়া সম্ভব হলো না বলে দূঃখিত)।

সূরা তাকাছুর : একবার তিলাওয়াত করলে, ১০০০ আয়াত তিলাওয়াতের সমপরিমান ছাওয়াব। (বায়হাক্বী,মিশকাত, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা: ১৯০)
সূরা তাকাছুর-
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
أَلْهَاكُمُ التَّكَاثُرُ (1) حَتَّىٰ زُرْتُمُ الْمَقَابِرَ (2) كَلَّا سَوْفَ تَعْلَمُونَ (3) ثُمَّ كَلَّا سَوْفَ تَعْلَمُونَ (4) كَلَّا لَوْ تَعْلَمُونَ عِلْمَ الْيَقِينِ (5) لَتَرَوُنَّ الْجَحِيمَ (6) ثُمَّ لَتَرَوُنَّهَا عَيْنَ الْيَقِينِ (7) ثُمَّ لَتُسْأَلُنَّ يَوْمَئِذٍ عَنِ النَّعِيمِ (8)

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে আমল করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন

থার্টিফাস্ট নাইট ও ইসলাম

মহান আল্লাহ আমাদের সুখ-শান্তির জন্য পৃথিবীকে অসংখ্য নিয়ামত দ্বারা সু-সজ্জিত করেছেন। তাঁর অন্যতম একটি নিয়ামত হচ্ছে দিন-রাত ও মাসের মাধ্যমে বৎসরের হিসাব। আমাদের উচিত এর শুকর বা কৃতজ্ঞতা আদায় করা এবং সময়ের কদর করা।
বর্তমানে আমরা ইংরেজী বর্ষবরণে “থার্টিফাস্ট নাইটের” নামে বিধর্মীদের অপসংস্কৃতির অনুরসণ করছি। অথচ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম ইরশাদ করে:
“যে, ব্যক্তি কোন জাতির সাদৃশ্যতা অবলম্বন করে সে তাদেরই অন্তর্ভূক্ত।
(আবূ দাঊদ-৪০৩১)

দিন-রাতের পরিবর্তনে আমাদের মৃত্যু ঘনিয়ে আসছে, আনন্দ-উল্লাস নয় পরকালের হিসাবের প্রস্তুতির প্রয়োজন। দিন-রাত এবং কবর প্রতিদিন আমাদের সতর্ক করছে। অথচ, আমরা উদাসিনতার মধ্যে সময় কাটিয়ে দিচ্ছি।

থার্টিফাস্ট নাইট উদযাপন হারাম-
(এক) এটি বিজাতী ও বিধর্মীদের একটি উৎসব, এতে মুসলমানদের অংশ গ্রহণ হারাম।
[আবূ দাঊদ ৪০৩১]

(দুই) আতশবাজী করে মানুষকে কষ্ট দেওয়া এবং অর্থের অপচয় করা হারাম।
[বানী ইসরাইল-২৭, আহযাব-৫৮ দ্রষ্টব্য]

(তিন) এতে তরুন-তরুনীরা নির্লজ্জভাবে রাস্তায় ঘুরা-ফেরা করে, আড্ডা দেয়, অবৈধ, অশ্লীল সম্পর্ক গড়ার এক সুযোগ সৃষ্টি হয় যা সম্পূর্ণ হারাম।
[সূরা নূর-৩০-৩১ দ্রষ্টব্য]

(চার) এতে মদ্যপান, বেহায়াপনা ও উলঙ্গপনার এবং অর্ধালোঙ্গ নারীর নাচ-গান শোনার এক গর্হিত গুনাহের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। যা সম্পূর্ণ হারাম।
[সূরা নিসা-২৩, লোকমান-৬ দ্রষ্টব্য]

পাপ আল্লাহর আযাব ডেকে আনে-
এগুলো সবই পাপ।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়া-সাল্লাম ইরশাদ করেন:
“যখন কোন জাতির মাঝে প্রকাশ্যে পাপ সংগঠিত হয় এবং ঐ জাতির লোকেরা তা বন্ধ করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বন্ধ করে না। তখন আল্লাহর আযাব তাদের (ভাল-মন্দ) সকলকে গ্রেফতার করে নেয়।
[মুসনাদে আহমাদ-১৯১২৮]

তাই আসুন!
নিজেরা জিম্মাদার হয়ে উম্মতকে পাপ থেকে বাঁচানোর জন্য মেহনত শুরু করি।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাওফীক্ব দান করুন। আমীন

Thursday, December 28, 2017

নববর্ষ : একটি বর্ষের আগমন একটি বর্ষের বিদায়:


(উক্ত পোস্টটি তাদের জন্য যারা আল্লাহকে স্মরণ করতে চায়!)
রাতের পর দিন আসে, দিনের পর রাত- এটা আল্লাহ তাআলার কুদরতের এক নিদর্শন। আল্লাহ তাআলার মহা কুদরতের এই নিদর্শন মানুষমাত্রই প্রত্যক্ষ করে। কিন্তু প্রাত্যহিকতার কারণে দিন-রাতের আবর্তন আমাদের কাছে অতি স্বাভাবিক। অথচ কেউ যদি দিন-রাতের এই আবর্তন নিয়ে চিন্তা করে তাহলে উপলব্ধি করতে পারবে, আল্লাহ তাআলা কত বড় শক্তিমান! তিনি কত নিপুণ, কত কুশল! তো সৃষ্টিজগতের এসকল বিষয় থেকে যারা আল্লাহর পরিচয় লাভ করে, কুরআনের দৃষ্টিতে তারা ‘উলুল আলবাব’ বুদ্ধিমান।

تَبَارَكَ الَّذِي جَعَلَ فِي السَّمَاءِ بُرُوجًا وَجَعَلَ فِيهَا سِرَاجًا وَقَمَرًا مُنِيرًوَهُوَ الَّذِي جَعَلَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ خِلْفَةً لِمَنْ أَرَادَ أَنْ يَذَّكَّرَأَوْ أَرَادَ شُكُورًا

অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা বলেন, বরকতময় সেই সত্তা যিনি আসমানে তারকারাজি সৃষ্টি করেছেন এবং তাতে দিয়েছেন একটি প্রদীপ ও আলোকিত চাঁদ। এবং তিনিই সেই সত্তা যিনি রাত ও দিনকে আবর্তনশীল বানিয়েছেন ঐ সকল লোকের উপকারের জন্যে যারা আল্লাহকে স্মরণ করতে চায় বা তাঁর শোকর আদায় করতে চায়। -সূরা ফুরকান ২৫ : ৬১-৬২

কেউ মহাকাশ সম্পর্কে অনেক জানল, সূর্য ও চন্দ্রের গতি সম্পর্কে অনেক জ্ঞান অর্জন করল, কিন্তু এ সকল কিছুর যিনি স্রষ্টা তাঁর পরিচয় পেল না, তার চেয়ে হতভাগা আর কেউ নেই। কুরআনের দৃষ্টিতে মূর্খ তারাই যারা তাদের জ্ঞানের দাবি পূরণ করে না। যারা জ্ঞানের দাবি পূরণ করে কুরআনের দৃষ্টিতে তারা জ্ঞানী। দ্বীনী জ্ঞান ও জাগতিক জ্ঞান উভয় ক্ষেত্রে এ কথা সত্য। সুতরাং যারা দ্বীনী ইলম শিক্ষা করে, কুরআন-সুন্নাহর জ্ঞান অর্জন করে এবং সে অনুযায়ী জীবনকে পরিচালিত করে, কুরআনের দৃষ্টিতে তারা জ্ঞানী। তদ্রূপ যারা জাগতিক শিক্ষা অর্জন করে এবং সৃষ্টির মাধ্যমে স্রষ্টার পরিচয় লাভ করে, কুরআনের দৃষ্টিতে তারাও জ্ঞানী।

দিন-রাতের বিবর্তনের আরেক শিক্ষা, জীবনের মূল্যবান সময় নিঃশেষ হওয়ার চেতনা। কবি বলেন,
‘গাফেল তুঝে ঘড়িয়াঁ দেতা হ্যায় মুনাদী, গরদুঁ নে ঘড়ী উমর কী এক আওর ঘটা দী।’
ওহে উদাসীন! ঘড়ির ঘণ্টা তোমাকে দিচ্ছে এই বার্তা যে, সময়ের ঘূর্ণন তোমার জীবন থেকে আরো এক ঘণ্টা বিয়োগ করল।

বিখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেছেন, ‘যখন সকাল হয়, সন্ধ্যার অপেক্ষা করো না। (সন্ধ্যার আগেই পাকসাফ হয়ে যাও, প্রস্তুত হয়ে যাও।) আর যখন সন্ধ্যা হয় সকালের অপেক্ষা করো না। (সকাল হওয়ার আগেই পাকসাফ হও, প্রস্তুত হও।) তুমি তো জান না, আগামীকাল তোমার নাম কী হবে? (তোমার নাম কি জীবিতদের তালিকায় থাকবে, না মৃতদের তালিকায়?)’ সুতরাং সময় থাকতেই প্রস্তুত হও। আল্লাহর নিকট সমর্পিত হও। ভেবো না, এখনও যৌবন! এখনও তারুণ্য!

আমাদের জীবন থেকে সময় বিয়োগ হচ্ছে। মানুষকে আল্লাহ তাআলা যেসকল সম্পদ দান করেছেন, সময়, সুস্থতা, অর্থ, বিত্ত, জ্ঞান, প্রজ্ঞা- এ সকল সম্পদের মধ্যে ‘সময়-সম্পদ’ সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। কারণ অন্যান্য সম্পদ একবার চলে গেলে আবার ফিরে আসতে পারে। একবার লোকসান হলে আবার লাভ হতে পারে। কিন্তু সময়-সম্পদ চলে গেলে আর ফিরে আসে না। সময়-সম্পদে কেবল বিয়োগই হয়, যোগ হয় না। তো রাত ও দিনের আবর্তনের মাঝে আছে অনেক শিক্ষা, অনেক উপদেশ ।

ইংরেজি ক্যালেন্ডার হিসাবে একটি নতুন বছর উপস্থিত হয়েছে। এ উপলক্ষ্য একশ্রেণীর মানুষ উৎসবে মেতে উঠে। ‘থার্টিফার্স্ট নাইটে’র নামে কিছু উচ্ছৃঙ্খল লোক এ সময়টিকে নানা গর্হিত অসামাজিক কার্যকলাপের জন্যেও বেছে নেয়। একটি বর্ষের আগমন কি শুধুই আগমন? একটি বষের্র আগমন কি জীবন থেকে একটি বর্ষের বিদায়ের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় না? কারো অর্থ-সম্পদ বিয়োগ হলে সে চিন্তা করে, এতে আমার কী মুনাফা হয়েছে? কিন্তু জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ ‘সময়’ জীবন থেকে বিয়োগ হয়ে যায়, অথচ একটুও চিন্তা হয় না যে, যে সময়টা গত হল তার কতটুকু কাজে লাগানো হয়েছে? এই সময়ে আমার ঈমান-আমলের কতটুকু উন্নতি হয়েছে? আখলাক-চরিত্র কতটুকু সংশোধিত হয়েছে? জ্ঞান-প্রজ্ঞা, মানবতা ও সমাজসেবায় আমি কতটুকু অগ্রসর হয়েছি? সর্বোপরি আল্লাহ তাআলার নৈকট্যের পথে এবং আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহর পথে কতটুকু অগ্রসর হয়েছি?

সময়ের বিবর্তন আমাদের এ শিক্ষা ও চেতনা দান করে।

সংগ্রহে : মাসুম সিরাজ
মোহতাজে দু’আ

Wednesday, December 27, 2017

একটি হাদীসের বিস্ময়কর ব্যাখ্যা


মাওলানা লিসানুল হক শাহরূমী
রসূলুল্লাহ সঃ বলেছেনঃ
"তোমাদের মধ্যে প্রত্যেকেই তার ভাইয়ের দর্পণ স্বরূপ ৷ সুতরাং যদি সে তার ভাইয়ের মধ্যে কোনো খারাবী দেখে--তাহলে সে যেন তা দূরীভূত করে"৷ ( রাবী আবূ হুরায়রাহ রদ্বি:, তিরমিযী)
এই উপমায় এমন পাঁচটি জ্যোতির্ময় ইঙ্গিত পাওয়া যায়; যার পরিপ্রেক্ষিতে আপনি আপনার বন্ধুত্বকে বাস্তবেই একটি আদর্শ বন্ধুত্বে রূপান্তর করতে পারেন৷

 (১) আয়না আপনার দাগ ক্ষত তখনই প্রকাশ করে, যখন আপনি তা দেখার জন্যে আয়নার সামনে দাঁড়ান৷ নয় তো সেও পূর্ণ নীরবতা অবলম্বন করে৷

তদ্রুপ আপনিও আপনার বন্ধুর দোষ ত্রুটি তখনই প্রকাশ করুন; যখন সে নিজেই সমালোচনার জন্যে আপনার সকাশে পেশ করে এবং হৃষ্টচিত্তে সমালোচনার সুযোগ দেয়, আর আপনিও উপলব্ধি করতে পারেন যে, তার মন এখন সমালোচনা শুনতে প্রস্তুত এবং সংশোধন কবুল করতে আগ্রহ ঢেউ খেলছে৷ যদি এরকম অবস্থা না দেখেন, তবে প্রজ্ঞার সাথে আপনি নীরবতা অবলম্বন করুন এবং বিষয়টি অন্য সময়ের জন্য তুলে রাখুন৷ আর তার অবর্তমানে এতোটাই সতর্কতা অবলম্বন করুন যে, আপনার মুখে এমন কোনো শব্দ যেন না আসে; যা তার দোষের প্রতি ইঙ্গিতবহ হয়৷ কারণ এটা গীবত আর গীবতের দ্বারা দীল গড়ে না, বরং ভাঙ্গে৷

(২) আয়না চেহারার সেসব ক্ষতচিহ্নকেই সঠিকভাবে প্রকাশ করে; যা তখন চেহারায় বিদ্যমান থাকে৷ না সে কম বলে, না সংখ্যা বাড়িয়ে উপস্থাপন করে৷ তারপর সে শুধু চেহারার সেসব দাগকেই দেখায় যা তার সামনে আসে৷
সে লুকিয়ে থাকা দোষ ত্রুটি অনুসন্ধান করে না, আর না খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দোষত্রুটির কাল্পনিক কোনো চিত্র পেশ করে৷

তদ্রুপ আপনিও বন্ধুর দোষত্রুটি কম বেশি না করে বর্ণনা করুন৷ অতি মানবতা আর খোশামোদে গোপনও করবেন না, আবার বাগ্মীতা দিয়ে বাড়িয়েও বলবেন না৷ শুধু সেসব দোষই বলুন যা সাধারণত জীবনে প্রকাশ পায় ৷ অনুসন্ধান আর তদন্তের পেছনে পড়বেন না৷

(৩) আয়না সমুদয় উদ্দেশ্য ও স্বার্থ থেকে পবিত্র হয়ে নিজের কর্তব্য আদায় করে৷ যে ব্যক্তিই তার সামনে চেহারা পেশ করে, তার সঠিক নকশা প্রকাশ করে৷ না সে কারো সাথে বিদ্বেষ রাখে, না কারো কাছ থেকে প্রতিশোধ নেয়৷

তদ্রুপ আপনিও ব্যক্তিগত স্বার্থ, প্রতিশোধ পরায়ণতা, বিদ্বেষ ও সব ধরনের অসদিচ্ছা থেকে পবিত্র হয়ে স্বাভাবিক সমালোচনা করুন এবং এই উদ্দেশ্যেই করুন যেন আপনার বন্ধু নিজেকে শুধরে নেয়; যেরকম আয়না দেখে মানুষ নিজেকে সাজিয়ে শুধরে নেয়৷

(৪) আয়নায় নিজের আসল অবয়ব দেখে- না কেউ বকাঝকা করে, না রাগে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে আয়না ভেঙ্গে ফেলার নির্বুদ্ধিতা করে৷ বরং সাথে সাথেই নিজেকে সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে এবং মনে মনেই আয়নার মূল্য অনুভব করে৷ সময়ের ভাষায় তার শুকরিয়া আদায় করে আর বলে, বাস্তবেই আয়নাটা আমার সাজ সজ্জায় দারুণ সহায়তা করেছে! আর স্বভাবজাত কর্তব্য আদায় করেছে৷ অতঃপর খুব সতর্কতার সাথে অন্য সময়ের জন্যে হেফাযতে রাখে৷

তদ্রুপ আপনিও বন্ধুর সমালোচনায় জবাবি হামলা করে বসবেন না৷ বরং তার শুকরিয়া করুন যে, সে বন্ধুত্বের হক আদায় করেছে ৷ শুধু যবানে নয়, মনে মনেও কৃতজ্ঞ হয়ে তৎক্ষণাত নিজের সংশোধনে ব্যপৃত হোন আর বন্ধুর মূল্য উপলব্ধি করুন আর অনুরোধ করুন যেন আগামীতেও এভাবে তার মূল্যবান পরামর্শ দিয়ে কৃতজ্ঞ করে৷

(৫) মুসলমানদের মধ্যে প্রত্যেকে তার ভাইয়ের আয়না এবং ভাই ভাইয়ের নিষ্ঠা ও ভালোবাসার দর্পণ৷ ওয়াফাদার ও কল্যাণকামী হয়৷ সহমর্মী ও সহানুভূতিশীল হয় ৷ ভাইকে বিপদে দেখে কেঁদে ওঠে আর খুশিতে দেখে আনন্দে দিশেহারা হয়ে যায় ৷ অতএব, ভাই ও বন্ধু যে সমালোচনা করবে তাতে অতিশয় মর্মজ্বালা ও সহমর্মিতা থাকবে ৷ ভালোবাসা ও নিষ্ঠা থাকবে ৷ সীমাহীন সহানুভূতি ও হিতাকাঙ্খা থাকবে, আর প্রতিটি শব্দ হবে সংশোধনের প্রবল আগ্রহের দর্পণস্বরূপ৷

আর এরকম সমালোচনার দ্বারাই হৃদয়ের বন্ধন তৈরি ও জীবনকে সাজানোর প্রত্যাশা করা যেতে পারে৷
রসূলুল্লাহ সঃ বলেনঃ যে ব্যক্তি অন্যের দোষ তালাশ করে-মহান আল্লাহ তার দোষ প্রকাশ করার ইচ্ছা করেন-আর যার দোষ আল্লাহ প্রকাশ করার ইচ্ছা করেন-আল্লাহ তাআলা তাকে লাঞ্চিত করেই ছাড়েন ৷ যদিও সে ঘরের কোণেই বসে থাকে৷

তাহারাত বা পবিত্রতা


আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“আর তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে হায়েয (ঋতু) সম্পর্কে। বলে দাও, এটা অশুচি। কাজেই তোমরা হায়েয অবস্থায় স্ত্রীগমন থেকে বিরত থাক। তখন পর্যন্ত তাদের নিকটবর্তী হবে না, যতক্ষণ না তারা পবিত্র হয়ে যায়। যখন উত্তম রূপে পরিশুদ্ধ হয়ে যাবে, তখন গমন কর তাদের কাছে, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে হুকুম দিয়েছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারী এবং অপবিত্রতা থেকে যারা বেঁচে থাকে তাদেরকে পছন্দ করেন।” [সূরা আল বাকারা, আয়াত-২২২]

হাদীসে বলা হয়েছে-
ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) ... আবূ মালিক আশ আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, পবিত্রতা হল ঈমানের অংশ। “আলহামদুলিল্লাহ” (শব্দটি) পাল্লাকে ভরে দেয়। “সূবহানাল্লাহ ও আলহামদুলিল্লাহ (পাল্লাকে) ভরে দেয়, কিংবা [রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন] আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যবতীঃ স্থান ভরে দেয়। সালাত নামায হল আলো, সদাকা হল প্রমাণিকা, ধৈর্য হল জ্যোতি। কুরআন তোমার পক্ষে কিংবা বিপক্ষে দলীল। প্রত্যেক মানুষ প্রত্যহ আপন সত্তাকে বিক্রি করে, তখন কেউ সত্তার উদ্ধারকারী হয় আর কেউ হয় ধবংস কারী।
সূত্র:
পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন
 গ্রন্থঃ সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
 অধ্যায়ঃ ২/ তাহারাত (পবিত্রতা) ( كتاب الطهارة)
 হাদিস নাম্বার:৪২৭

পবিত্রত হচ্ছে ঈমানের মূল। তাই পবিত্রতা অর্জন ব্যতিত সালাত বিশুদ্ধ হবে না।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম আরো বলেন:
সালাতের চাবি হচ্ছে পবিত্রতা:
আবূ বকর, মুহাম্মাদ ইাবন যানযাওয়ায়ই আল বাগদাদী (রহঃ) এবং আরো একধিক রাবী ........ জাবির ইবনু আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ জান্নাতের চাবি হল সালাত আর সালাতের চাবি হল ওয়াযু।
সূত্র:
পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন
 গ্রন্থঃ সূনান তিরমিজী (ইফাঃ)
 অধ্যায়ঃ ১/ পবিত্রতা ( كتاب الطهارة عن رسول الله ﷺ)
 হাদিস নাম্বার:৪

তাহারাত (পবিত্রতা)-এর আভিধানিক অর্থ: তাহারাতের আভিধানিক অর্থ হল- পরিস্কার-পবিচ্ছন্নতা,পবিত্রতা।

শরীয়তের পরিভাষায় তাহারাত দুই ভাগে বিভক্ত:
এক. হাদাছ (যে সব কারণে ওয়াযু বা ফরয গোসলের প্রয়োজন হয়)-থেকে পবিত্রতা অর্জন করা, তাকে তাহারাতে হুকমী বলে।
দুই. নাজাছাত (অপবিত্রতা)-থেকে পবিত্রতা অর্জন করা, তাকে তাহারাতে হাকীকিয়্যাহ বলা হয়।

হাদাছ থেকে ওয়াযু,গোসল অথবা (যখন পানি ব্যবহার করতে অক্ষম হয় তখন) তায়াম্মুন দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা হয়। [তায়াম্মুম বিষয়ে তায়াম্মুম বিভাগে দেখুন]
যে সকল পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যমগুলো দ্বারা নাপাকী দূর করা যায়। যেমন, বিশুদ্ধ পানি, পবিত্র পানি, পাথর অথবা প্রক্রিয়াজাতকৃত চামড়া ইত্যাদি।

Tuesday, December 26, 2017

দুবাই ভিসা চালু সংক্রান্ত বিষয়ে কিছু কথা!


এক ,

কিছু ফেসবুক ইউজার , দেশী এবং প্রবাসী তথাকথিত সাংবাদিক নামের কিছু দুষ্ট লোকের দুষ্টামির কারণে অনেকে বিভ্রান্ত হচ্ছেন। আমাদের দেশ মধ্যপ্রাচ্যের প্রতি অনেকটা দুর্বল। কারণ আমরা এখনো শতভাগ উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারিনি বলে মধ্যপ্রাচের প্রবাসী শ্রমিকদের টাকায় দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল থাকার স্বপ্ন দেখি। গ্রাম বাংলার লক্ষ্য লক্ষ্য পরিবার এবং কোটি কোটি জনতা মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসীদের শ্রমের মজুরির প্রতি নির্ভরশীল।

২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স আয়ের দ্বিতীয় বৃহৎ উৎস দেশ আরব আমিরাত ভিসা প্রদান বন্ধ রেখেছে। ২০১৪ সালের শুরুতে সম্ভবত ফেব্রুয়ারিতে আনুষ্টানিক ভাবে বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য পুরোপুরি বন্ধ হয় দুবাই তথা সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) ভিসা।সেই থেকেই কর্মসংস্থান বা এমপ্লয়মেন্ট ভিসা, ট্যুরিস্ট বা ভ্রমণ ভিসা এবং সব ধরনের বাণিজ্যিক ভিসা প্রদান সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রেখেছে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স আয়ের দ্বিতীয় বৃহৎ উৎস দেশটি। যদিও আংশিক ট্যুরিস্ট বা ভ্রমণ ভিসা চালু আছে।

দুই ,

ভিসা বন্ধের কারণ অনেকেই অনেক রকম বলে আসছেন তাও নিজের করে। বন্ধের কারণ নিয়ে এখন আর ভাবার বিষয় নেই এখন ভিসা খুলবে কবে সেটা নিয়ে ভাবতে হবে এবং কি করে খুলবে তা উপলব্ধি করে সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে। দুবাইয়ে বাংলাদেশী দুতাবাস, বাংলাদেশী কনস্যুলেট কিংবা দেশের সরকার ভিসা বন্ধের সঠিক কারণ পরিষ্কার করেনি তাহলে আমরা কেন এ নিয়ে এতো কথা বলি? আমার মতে বলার কথাও নয় কারণ ভিসা বন্ধ রেখেছে আমিরাত সরকার। আমিরাতই ভালো জানে কবে চালু করবে। গত ৫ বছর থেকেই কিছু লোক প্রতি ডিসেম্বরে ভিসা চালুর মিথ্যে খবর প্রচার করে। আমিরাত সরকার বেলুন নয় যে ফুলার সময় লোকে দেখবে। বাংলাদেশের মত নয় যে কিছু একটা হচ্ছে বললেই কিছুদিন পর দেখা যায় ঠিকই হচ্ছে। আমিরাত সরকার যখন ভিসা চালু করবে সেই দিন মিডিয়ার মাধ্যমে জানিয়ে দেবে এর আগে কেউ জানবেনা। তবে আমাদের দূতাবাস ভিসা চালু করার জন্য অনেক কৌশলিক কাজ করতে পারে। প্রথম দিকে দুতাবাস নিরব থাকেলও ভিসা চালুর বিষয়ে এখন অনেকটা তৎপরতা চালাচ্ছে। পাশাপাশি সরকার ও অনেক চেষ্টা চালাচ্ছে।

তিন ,

Mark Elliot Zuckerberg এর তৈরী করা ফেসবুকে আইডি বানিয়ে এবং কিছু নামে বেনামে অনলাইন পত্রিকায় মিথ্যে নিউজ করে দুবাই ভিসা চালুর অপেক্ষায় থাকা গ্রাম বাংলার মানুষের আবেগ নিয়ে খেলা করছে। আজ হচ্ছে চালু কাল হচ্ছে চালু এসব খবর পোস্ট করে লাইক কমেন্ট পাওয়া যায় বা অনলাইন পত্রিকা প্রচার করা যায় কিন্তু আবেগ নিয়ে খেলা করার অপরাধের শাস্তি প্রাপ্য হয়ে যায় সেটা খেয়াল করেনা। বছর দুয়েক আগে দুবাইয়ের পক্ষ থেকে ঢাকায় দুবাই ভিসা সংক্রান্ত একটি অফিস খুলা হয়েছিল আর বাংলাদেশের কিছু ব্যক্তি প্রচার করছে ভিসা চালু হয়েছে। মূলত ভিসা চালু হয়নি শুধু মাত্র ভিসা সংক্রান্ত সুবিধার জন্য অফিস করা হয়েছিল। এদিকে আমাদের মন্ত্রী সাহেবরা বারবার বলেন দুই দেশ ভিসা চালুর জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

চার,

আমিরাতে বাংলাদেশী শ্রমিকের প্রয়োজনীয়তা অনেক রয়েছে । আমিরাতের কর্মসংস্থান বিবেচনায় বলা যায় ইনশা আল্লাহ আবার ভিসা চালু হবে তবে সেটা কবে বলা যাচ্ছেনা। কয়েক বছর যেতে পারে আবার কয়েক মাসের মধ্যেও ভিসা চালু হতে পারে। আমিরাতের মিডিয়া যখন জানিয়ে দেবে ভিসা চালু হয়েছে সেদিন থেকে সঠিক চালু হয়েছে বলে ধরে নেবেন এর পূর্বে নয়।
নতুন বছর উপলক্ষে আর ভোটের রাজনীতিতে ভিসা চালু নিয়ে অহেতুক কথা না বলাটাই উত্তম।

(লিখাটা ২০১৫ সালের। গেল কয়েকদিন থেকে আবারো ভিসা চালু নিয়ে নানান খবর দেখে পোস্ট করতে বাধ্য হলাম)

আব্দুল্লাহ আল শাহীন
শারজাহ/ইউএই

Monday, December 25, 2017

ডোনাল ট্রাম্পকে বন্যায় ভাসিয়ে দিলেন মুফতি কিফায়াতুল্লাহ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল ট্রাম্প কর্তৃক পবিত্র জেরুজালেম নগরীকে ইসরাঈলের রাজধানী ঘোষণার প্রতিবাদে আজ সোমবার দুপুরে টেকনাফ উপজেলা কে.জি স্কুল ময়দানে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশ টেকনাফ-এর স্মরণাতীত কালের সর্ব বৃহত্তম দ্বীনি সমাবেশে রূপান্তরিত হয়েছে।

টেকনাফ উপজেলার সম্মিলিত ওলামা পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত উক্ত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উখিয়া-টেকনাফ আসনের জনপ্রিয় এমপি আলহাজ আবদুর রহমান বদি সিআইপি বলেন, আজকের সমাবেশে আপনাদের মত আমিও ঈমানের টানে উপস্থিত হয়েছি৷ তবে পরিস্কার ভাষায় বলতে চাই, আলেম ওলামাদের সার্বিক সহযোগিতা ও আন্তরিক দুআর বরকতে আমি সংসদে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছি৷ অতএব, আলেমগণের যে কোন কর্মসূচিতে আমি ছিলাম আগামীতেও থাকব। ইনশা আল্লাহ...

পরিষদ সভাপতি মাওলানা মাহবূবুর রহমান মুজাহেরীর সভাপতিত্বে, টেকনাফ নিউজ.কম এর সম্পাদক মাওলানা সাইফুল ইসলাম সাইফী ও সাংবাদিক মাওলানা মুহাম্মদ জুবাইর -এর যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠিত উক্ত সমাবেশে প্রধান বক্তার আলোচনায় টেকনাফ জামিয়ার শায়খুল হাদীস ও সুযোগ্য মুহতামিম মাওলানা মুফতি কিফায়াতুল্লাহ শফিক বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জনাব ডোনাল্ড ট্রাম্প এর অনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে ওআইসিভুক্ত সকল দেশসহ জাতিসংঘের ১২৮টি বৃত্তম দেশ তার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছে। ৩৫টি দেশ নিরবতার ভূমিকা পালন করেছেন। আমেরিকা ও ইসরাঈলসহ মাত্র ৯টি দেশ তার পক্ষে সমর্থন করেছে।

তিনি বলেন, বলতে গেলে সারা পৃথিবী তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার পরও তিনি তার সিদ্ধান্ত এখনো পর্যন্ত প্রত্যাহার করে নাই।

মুফতি কিফায়াতুল্লাহ শফিক অশ্রু সজল নয়নে বলেন, আজকের এই ময়দানে সমবেত আমরা হাজার হাজার মুসলমান সর্ব শক্তিমান আল্লাহ তা‘আলার শাহী দরবারে ডোনাল ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে ফরিয়াদ করবো সারা বিশ্বের মুসলমান যদি এইভাবে ফরিয়াদ করে আমার দৃঢ় বিশ্বাস বিশ্বের দুইশত কোটি মুসলমানের চোখের পানির বন্যায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল ট্রাম্প-এর অস্তিত্ব পর্যন্ত খোঁজে পাওয়া যাবে না। ইনশা আল্লাহ...

অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সদর ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান মিয়া, মাওলানা মমতাজ শাহীন, বাহারছড়া ইউপির চেয়ারম্যান মাওলানা আজীজুদ্দীন, লম্বরী মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা আবদুল হক হক্কানী, হ্নীলা জামিয়া ইসলামিয়া দারুসসুন্নাহ মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মাওলানা আলী আহমদ, সাবরাং মাদরাসার পরিচালক মাওলানা নুর আহমদ, টেকনাফ জামিয়ার সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা মুফতি রিদওয়ানুল কাদির, ক্বারী ফরিদুল আলম, অধ্যক্ষ মাওলানা কামাল হোছাইন , মাওলানা সলীমুল্লাহ৷

অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন, টেকনাফ উপজেলা পরিষদের ভার প্রাপ্ত চেয়ারম্যান মাওলানা রফিকুদ্দীন, পৌর প্যানেল মেয়র-১ মাওলানা মুজিবুর রহমান, পৌর কাউন্সিলর হোসেন আহমদ, আমিরুজ্জামান, মাওলানা ছৈয়দুল ইসলাম মেম্বার, শাহপরীর দ্বীপ বড় মাদরাসার ভার প্রাপ্ত পরিচালক মাওলানা মুফতি ইউনুস, দারুশ শরীয়াহ মাদরাসার পরিচালক মাওলানা ফিরুজ আহমদ, লেদা ইবনে আব্বাস মাদরাসার পরিচালক মাওলানা ক্বারী শাকের, গোদার বিল আনাস বিন মালেক মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা শফিউল্লাহ, তুলাতুলী মাদরাসার পরিচালক মাওলানা মুহাম্মদ শফি সুফি , টেকনাফ জামিয়ার সিনিয়র শিক্ষক ইলিয়াছ ফারুক্বী, টেকনাফ জামিয়ার সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা মুহাম্মাদ হেলাল, সাবরাং মাদ্রাসা রশিদিয়া ফয়জুল উলূমের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মাওলানা রাহমতুল্লাহ, মাদ্রাসা হোছাইনিয়া ফয়জুল উলূম মাদ্রাসার উপ পরিচালক মাওলানা নুরুল বশর, উপজেলা স্বেচ্ছা সেবক লীগের সভাপতি সরওয়ার আলম প্রমুখ।