আবুল হুসাইন আলেগাজী
১. যারা গবেষণামূলক কাজ করে, তাদের জন্য ফেসবুক চালানো অনেক কঠিন। ফেসবুক মূলত একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। এখানের লাইক অপশনটাও ব্যবসায়িক মনোভাব থেকে। এটির যুবক মালিক মার্ক জুকারবার্গ (একজন আমেরিকান ইহুদী) বর্তমানে পৃথিবীর অন্যতম ধনী।
ফেসবুক ও ইউটিউবের ভালো-মন্দ উভয় দিক রয়েছে। ভালো কাজে ব্যবহার করলে ভালো আর খারাপ কাজে ব্যবহার করলে সেটি খারাপ। যাই হোক, গতকাল বাংলাদেশ সময় রাত ১২টায় আমেরিকা বাইতুল মাকদিস অধ্যুষিত আল-কুদস তথা জেরুসালেম শহরকে ইসরাঈলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
ইসরাঈল কয়েক দশ ধরে তার রাজাধানী তেল-আবিব থেকে জেরুজালিমে স্থানাস্তর করার চেষ্টা চালিয়ে আসছিল। আজ সেই সেই বিশ্বমোড়ল কর্তৃক স্বীকৃতি পেল। বৃটেন কর্তৃক ১৯৪৮ সালে আনুষ্ঠানিক ভাবে ইসরাঈল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করার ১৯ বছর পর ১৯৬৭ সালের জুনে সঙ্ঘটিত ৬ দিনের যুদ্ধে শহরটি ইসরাঈল আরব রাষ্ট্র জর্দান থেকে দখল করে নেয়। একই যুদ্ধে ইসরাঈল মিসরের কাছ থেকে গাজা শহরটিকেও দখল করে নেয়।
ইসরাঈলের প্রধান পৃষ্টপোষক আমেরিকা কর্তৃক জায়োনিস্ট ইহুদীদের যাবতীয় ইচ্ছাপূরণের তৎপরতা অনাকাঙ্খিত কিছু নয়। কারণের দোয়াল্লীনরা মাগজুব আলাইহিমদের মনোরঞ্জন করবে- এটাই স্বাভাবিক। সত্য হলো, ইহুদী, খ্রীষ্টান, হিন্দু ও বৌদ্ধকে আমরা মুসলমানরা দুশমন ভাবলেও আমাদের মধ্যকার জিন্দীক ও মুনাফিকদের আমরা চিনতে পারি না। বরং তাদেরকে আমরা মুসলিম বলেই স্বীকৃতি দিই।
অথচ এসব জিন্দীক ও মুনাফিকদের সহযোগিতা ও নির্লিপ্ততা না থাকলে কোনো কাফির গোষ্ঠী কোনো মুসলিম গোষ্ঠীর উপর জবরদখল চালাতে পারতো না। তবে এটাও সত্য যে, আমরা সাধারণ মুসলমানদের অধিকাংশও জিন্দীক ও মুনাফিক হয়ে গেছি। না হয় কাফিরদের তাঁবেদার জিন্দীক প্রকৃতির লোকগুলো আমাদের রাজনীতি, অর্থনীতি ও ধর্মনীতি সর্বত্র আধিপত্য বিস্তার করতে পারতো না।
সৌদি যুবরাজসহ এ জিন্দিকেরা এখন বা এর আগে তাগুত ট্রাম্পসহ অন্যান্য জালিমেদর সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে যা বলেছে বা বলছে, তা ধুমপায়ী লোকজনের সিগারেটের প্যাকেটে লেখা 'ধুমপান মৃত্যু ডেকে আনে' টাইপের কথার কথা। এসব কথায় কোনা সার নেই।
যাই হোক, অনেকের স্বপ্নের ‘স্বাধীন ফিলিস্তীন রাষ্ট্র’র কল্পিত রাজধানী জেরুসালিমকে বিশ্বতাগুত আমেরিকা কর্তৃক ইসরাঈলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়াতে আমার ইমাম মাহদী ও দাজ্জালের আবির্ভাবের সময় ঘনিয়ে আসার ধারণা লাভ করতে পারি। সবসময় মুমিনের কর্তব্য যে যেখানে আছে, সেখানে বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ থেকে সাধ্যমত কুফর-জুলুমের প্রতিবাদ করে যাওয়া। হাতে বা মুখে কিছু করতে না পারলে অন্তত অন্তর থেকে হলেও কুফর-জুলুমের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করা।
২. এবার আসুন ভালো কাজে দান, জুলুমে ধৈর্য্য এবং দুনিয়াতে মানুষের প্রকারভেদ বর্ণনাকারী একটি ছহীহ হাদীছ শুনিঃ
عن أبي كبشَةَ الأنماريُّ رضي اللَّه عنه أنَّهُ سمعَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلِيهِ وسَلَّم يقول: « ثَلاثَةٌ أُقْسِمُ عَلَيهِنَّ وَأُحَدِّثُكُم حَدِيثاً فَاحْفَظُوهُ: مَا نَقَصَ مَالُ عَبدٍ مِن صَدَقَةٍ ، وَلا ظُلِمَ عَبْدٌ مَظْلَمَةً صَبَرَ عَلَيهَا إِلاَّ زَادَهُ اللَّهُ عِزّاً ، وَلا فَتَحَ عَبْدٌ باب مَسأَلَةٍ إِلاَّ فَتَحَ اللَّه عَلَيْهِ باب فَقْرٍ ، أَوْ كَلِمَةً نَحْوَهَا . وَأُحَدِّثُكُم حَدِيثاً فَاحْفَظُوهُ . قال إِنَّمَا الدُّنْيَا لأَرْبَعَةِ نَفَر : عَبدٍ رَزَقَه اللَّه مَالاً وَعِلْماً ، فَهُو يَتَّقي فِيهِ رَبَّهُ ، وَيَصِلُ فِيهِ رَحِمَهُ ، وَيَعْلَمُ للَّهِ فِيهِ حَقا ، فَهذَا بأَفضَل المَنازل . وَعَبْدٍ رَزَقَهُ اللَّه عِلْماً ، وَلَمْ يَرْزُقهُ مَالاً فَهُوَ صَادِقُ النِّيَّةِ يَقُولُ : لَو أَنَّ لي مَالاً لَعمِلْتُ بِعَمَل فُلانٍ ، فَهُوَ نِيَّتُهُ ، فَأَجْرُهُمَا سَوَاءٌ . وَعَبْدٍ رَزَقَهُ اللَّهُ مَالاً ، وَلَمْ يرْزُقْهُ عِلْماً ، فهُوَ يَخْبِطُ في مالِهِ بِغَير عِلمٍ ، لا يَتَّقي فِيهِ رَبَّهُ وَلا يَصِلُ رَحِمَهُ ، وَلا يَعلَمُ للَّهِ فِيهِ حَقا ، فَهَذَا بأَخْبَثِ المَنَازِلِ . وَعَبْدٍ لَمْ يرْزُقْهُ اللَّه مَالاً وَلا عِلْماً ، فَهُوَ يَقُولُ: لَوْ أَنَّ لي مَالاً لَعَمِلْتُ فِيهِ بِعَمَل فُلانٍ ، فَهُوَ نِيَّتُهُ ، فَوِزْرُهُمَا سَوَاءٌ ». أخرجه الترمذى (4/562 ، رقم 2325) وقال: حسن صحيح . وابن ماجه (2/1413 ، رقم 4228) ، وأحمد (4/231 ، رقم 18060) ، والطبرانى (22/345 ، رقم 867) ، والبيهقى في الكبري (4/189 ، رقم 7617) .
অর্থঃ হযরত আবু কাবশা আমর ইবন সা’দ আল-আনমারী -رضي الله عنه- থেকে বর্ণিত।
তিনি রসূলুল্লাহকে صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم একথা বলতে শুনেছেন,
“তিনটি বিষয় সম্পর্কে আমি তোমাদের শপথ করে বলছি। তোমরা তা ভালোভাবে স্মরণ রেখো।
এক. দানের কারণে কোন বান্দার সম্পদ কমে না।
দুই. কোন বান্দা যদি কোন জুলুমের প্রতি ধৈর্য্য ধারণ করে, তাহলে আল্লাহ এর বিনিময়ে তার সম্মান বৃদ্ধি করে দেন।
তিন. কোন বান্দা যদি ভিক্ষার হাত উন্মুক্ত করে, তাহলে আল্লাহ তার জন্য দরিদ্রতার দরজা খুলে দেন। অথবা, তিনি এ জাতীয় আরেকটি কথা বলেছেন। আমি আরেকটি কথা তোমাদের বলছি, কথাটি ভালো করে মনে রাখবে-
দুনিয়াতে চার ধরণের লোকই বিদ্যমান।
এক. ঐ বান্দা, যাকে আল্লাহ সম্পদ ও ইলম দান করেছেন। আর সে এ ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করে চলে (অর্থাৎ, অর্থ উপার্জন ও ব্যয়ে নিষিদ্ধ পথে যায় না এবং মানুষকে ইলম শিক্ষা দান করে) এবং তা দ্বারা সম্পর্কের বন্ধন রক্ষা করে চলে এবং এর সাথে জড়িত আল্লাহর অধিকার (দাওয়াত, যাকাত, ফিতরা, কাফফারা, নযর, দান ইত্যাদি) সম্পর্কে সচেতন থাকে। তো এ লোক উৎকৃষ্টতম মর্যাদার অধিকারী।
দুই. ঐ বান্দা যাকে আল্লাহ ইলম দান করেছেন। কিন্তু তাকে ধন-সম্পদ দান করেননি। অথচ সে (সম্পদ ব্যয় করা নিয়ে) খাঁটি ইচ্ছার অধিকারী। সে বলে, আমার কাছে যদি ধন-সম্পদ থাকত, তাহলে আমি অমুকের ন্যায় আমল (ভালো কাজে ব্যয়) করতাম। আর তাই তাঁর খাঁটি ইচ্ছা। তো এরা দু’জনই ছওয়াবের দিক থেকে সমান।
তিন. ঐ বান্দা, যাকে আল্লাহ ধন-সম্পদ দিয়েছেন। কিন্তু ইলম দান করেননি। সে ইলম ছাড়াই (অনুপযুক্ত পথে) সম্পদ বিনষ্ট করে। এ ব্যাপারে সে তার প্রভুকে ভয় করে না এবং আত্মীয়তার বন্ধনও রক্ষা করে চলে না। আর এতে সে আল্লাহর অধিকার (যাকাত, ফিতরা, কাফফারা, নযর, দান ইত্যাদি) সম্পর্কেও সচেতন নয়। এ লোক হচ্ছে নিকৃষ্টতম স্তরের।
চার. ঐ বান্দা, যাকে আল্লাহ সম্পদ ও ইলম কোনটিই দান করেননি। অথচ সে বলে, আমাকে যদি আল্লাহ সম্পদ দান করতেন, তাহলে আমি অমুকের ন্যায় আমল (অনুপযুক্ত পথে সম্পদ বিনষ্ট) করতাম। আর এটাই তার খাঁটি ইচ্ছা। তো এ দুইজনের গুনাহ সমান।”
[সুনানে তিরমিযী (২৩২৫), সুনানে ইবনে মাজা (৪২২৮) ও মুসনদে আহমদ (১৮০৬০) প্রভৃতি]
শিক্ষাঃ উপযুক্ত হাদীছ দ্বারা জানা যায়-
১. ইলম ও সম্পদ কারো নিজস্ব যোগ্যতায় অর্জিত হওয়ার বিষয় নয়। আল্লাহর ইচ্ছায়ই মানুষ আলিম-জাহিল ও ধনী-দরিদ্র হয়।
২. কাউকে আল্লাহ ইলম ও সম্পদ দান করলে তার অধিকার রক্ষা করা তথা ইলমের যথাযথ প্রচার ও সম্পদকে সঠিক খাতে ব্যয় করা আবশ্যক। নতুবা তার জন্য অপেক্ষা করছে আগুনের শাস্তি ‘জাহান্নাম’।
৩. কারো সম্পদ না থাকলে সে যদি ভালো লোক হয় এবং সম্পদ অর্জিত হলে সে তা ভালো কাজে ব্যয়ের খাঁটি ইচ্ছা রাখে, তাহলে আল্লাহ তাকে ভালো কাজে সম্পদ ব্যয়কারী ধনীর সমান মর্যাদা দান করবেন।
৪. যেসব দরিদ্র লোক ধনী হলে অপচয়কারী مسرف ধনীর মত হওয়ার ইচ্ছা রাখে, তারা দরিদ্র অবস্থায় থেকেও আল্লাহর কাছে ওই অপচয়কারী ধনীর মত অপরাধী হবে।
মহান রব আমাদেরকে দীনি ইলম ও ভালো কাজে ব্যয় করার জন্য সম্পদ দান করুন।
0 comments:
Post a Comment