সংক্ষেপে বলা যায়, খৃস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দী, যে শতাব্দীতে মু’হাম্মাদ রসূলুল্ল-হ্ স্বল্লাল্ল-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আবির্ভাব ঘটে, তা ছিল ইতিহাসের নিকৃষ্টতম যুগ এবং মানবাতার ভবিষ্যত, তার স্থায়িত্ব ও উন্নতির দিক দিয়ে অত্যন্ত অন্ধকার ও হাতাশাব্যঞ্জক। বিখ্যাত ইংরেজ লেখক H.G. Wells সাসানী ও বায়যান্টাইন রাজত্বের আলোচনা করতে গিয়ে সেই যুগের চিত্রাংকন করেছেন। তাঁর ভাষায়-
“বিজ্ঞান ও রাজনীতি দু’টোই সংঘর্ষমুখর ও ধ্বংসোন্মুখ রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে মৃত্যুর ঘুমে ছিল বিভোর। এথেন্সের শেষ দিককার দার্শনিকগণ তাদের ধ্বংস পর্যন্ত, যা তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল, প্রাচীন যুগের সাহিত্যিক পুঁজিকে, যদিও কোনরূপ চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই কিন্তু সীমাহীন শ্রদ্ধার সঙ্গে সংরক্ষণ করেছিল। কিন্তু এখন পৃথিবীতে মানুষের এমন কোন শ্রেণী বাকী ছিল না যারা প্রাচীণ কালের অভিজাতগণের মত নির্ভীক ও মুক্ত চিন্তার সমর্থক হতো এবং প্রাচীনদের রচনাবলীর ন্যায় অনুসন্ধান ও গবেষনা কিংবা নির্ভীক মতামত প্রকাশের বাহক হতো। এই শ্রেণীর নির্মূল হওয়ার বিশেষ কারণ হলো রাজনৈতিক ও সামাজিক বিশৃঙ্খলা। কিন্তু এর আরও একটি কারণ ছিল যদ্দরুন ঐ আমলে মানবীয় প্রতিভা ও বুদ্ধিমত্তা ভোঁতা ও শুস্ক মরুভূমিতে পরিণত হয়েছিল। ইরান ও বায়যান্টাইন এই দুই সাম্রাজ্যের মধ্যে অসহযোগিতা ও অসহিষ্ঞুতা বিরাজ করছিল উভয় সামা্রাজ্যই ছিল এক নতুন ধরনের ধর্মীয় রাষ্ট্র যেখানে স্বাধীন মতামত প্রকাশের ওপর কড়া পাহারা বসানো হয়েছিল।”
বায়যান্টাইন সাম্রাজ্যের ওপর পারসিক সামা্রাজ্যের আক্রমণ ও পারসিক সাম্রাজ্যের ওপর বায়যান্টাইনদের বিজয় কিছুটা বিস্তারিত আকারে আলোচনার পর খৃস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীতে সামাজিক ও নৈতিক অধঃপতনের ওপর আলোকপাত করতে গিয়ে গ্রন্থকার বলেনঃ
যদি কোন রাজনৈতিক ভবিষ্যদ্বক্তা সপ্তম শতাব্দীর সূচনায় বিশ্বের সামগ্রিক অবস্থার বিচার করে দেখতেন তাহলে তিনি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতেন যে, মাত্র কয়েক শতাব্দীর ব্যাপার, গোটা ইউরোপ ও এশিয়া মোঙ্গলদের পদানত হবে। পশ্চিম ইউরোপে না ছিল কোন শৃঙ্খলা, আর না ছিল একতা। বায়যান্টাইন সাম্রাজ্য ও পারসিক সাম্রাজ্য এক অপরকে ধ্বংস করার ধনুর্ভঙ্গ পণ করে বসেছিল। ভারতবর্ষও ছিল বিচ্ছিন্নতা ও বিপর্যয়ের শিকার।
0 comments:
Post a Comment